ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীর হত্যা, ইহুদি মিউজিয়ামের কাছে হামলা

ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীর হত্যা, ইহুদি মিউজিয়ামের কাছে হামলা

২১ মে, ২০২৫-এ রাত ৯টার পর ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল ইহুদি মিউজিয়ামের কাছে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মচারী, একজন পুরুষ ও একজন নারী, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “আজ রাতে ইহুদি মিউজিয়ামের কাছে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মচারী নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সক্রিয়ভাবে তদন্ত করছি এবং আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য কাজ করছি।” ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লিটার জানান, নিহতরা একটি দম্পতি ছিলেন, যারা আগামী সপ্তাহে জেরুজালেমে বাগদানের পরিকল্পনা করছিলেন।

ঘটনার বিবরণ: মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান পামেলা এ. স্মিথ জানান, হামলাকারী, ৩০ বছর বয়সী শিকাগোর বাসিন্দা ইলিয়াস রদ্রিগেজ, মিউজিয়ামের বাইরে ঘোরাফেরা করছিলেন। তিনি চারজনের একটি দলের দিকে বন্দুক তাক করে গুলি চালান, যার মধ্যে দুজন নিহত হন। গ্রেপ্তারের সময় তিনি “ফ্রি, ফ্রি ফিলিস্তিন” স্লোগান দেন। হামলার পর তিনি মিউজিয়ামে প্রবেশ করেন এবং নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে ধরা পড়েন। এক্স-এ দাবি করা হয়েছে, রদ্রিগেজ ফিলিস্তিনি কেফিয়া পরেছিলেন, তবে এটি পুলিশ সরকারিভাবে নিশ্চিত করেনি।

তদন্ত ও প্রতিক্রিয়া: ঘটনাটি এফবিআইয়ের ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসের কাছে ঘটায় এফবিআইয়ের জয়েন্ট টেররিজম টাস্ক ফোর্স তদন্তে যোগ দিয়েছে। পুলিশ প্রধান স্মিথ জানান, হামলাকারী একাই কাজ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মেয়র মুরিয়েল বাউজার বলেন, “এই ঘটনা আমাদের শহর ও দেশের মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করবে। আমরা কোনো সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বা ইহুদি-বিদ্বেষ সহ্য করব না।” অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি এবং অস্থায়ী ইউএস অ্যাটর্নি জিনিন পিরো ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পূর্ণ আইনি ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ইসরায়েল ও আমেরিকার প্রতিক্রিয়া: ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতি ইসাক হারজগ এই হামলাকে “ইহুদি-বিদ্বেষী সন্ত্রাসবাদ” বলে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা ডিসির ইহুদি সম্প্রদায় ও আমেরিকার সঙ্গে একত্রে দাঁড়াব। সন্ত্রাস ও বিদ্বেষ আমাদের ভাঙতে পারবে না।” ইউএন-এ ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন এটিকে “জঘন্য ইহুদি-বিদ্বেষী সন্ত্রাস” বলে আখ্যা দিয়ে আমেরিকার আইনি ব্যবস্থার উপর ভরসা প্রকাশ করেছেন। ইসরায়েলি দূতাবাসের মুখপাত্র তাল নাইম কোহেন জানান, দুই কর্মচারী আমেরিকান জুইশ কমিটির (এজেসি) একটি অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় কাছাকাছি গুলিবিদ্ধ হন। এজেসির সিইও টেড ডিউচ বলেন, “আমরা এই অকল্পনীয় হিংস্রতায় মর্মাহত।”

প্রেক্ষাপট ও প্রভাব: এই হামলা গত এক বছরে আমেরিকায় ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ এবং ইসরায়েল-বিরোধী মনোভাবের মধ্যে প্রথম বড় ঘটনা। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং মানবিক সংকটের অভিযোগে আমেরিকায় ইহুদি-বিদ্বেষী ঘটনা বেড়েছে, যা ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। মিউজিয়ামটি সম্প্রতি নিরাপত্তার জন্য ৫০০,০০০ ডলারের একটি অনুদান পেয়েছিল, যা ইহুদি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা উদ্বেগকে তুলে ধরে।

এক্স-এ প্রতিক্রিয়া: এক্স-এ পোস্টগুলোতে এই হামলাকে ইহুদি-বিদ্বেষী সন্ত্রাস হিসেবে নিন্দা করা হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে ফিলিস্তিনপন্থী উগ্রতার ফল বলে মনে করছেন, আবার কেউ কেউ ট্রাম্প প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন। তবে, এই পোস্টগুলোর তথ্য সম্পূর্ণ যাচাই করা যায়নি।

উপসংহার: এই হামলা আমেরিকায় ইহুদি সম্প্রদায় ও ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তদন্ত চলছে, এবং রদ্রিগেজের উদ্দেশ্য ও সম্ভাব্য সহযোগীদের বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এই ঘটনা আমেরিকা-ইসরায়েল সম্পর্ক এবং ইহুদি-বিদ্বেষ বিরোধী পদক্ষেপের উপর নতুন আলোকপাত করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *