ভারতীয় অফিসারদের ভাষা প্রশিক্ষণ: তামিল থেকে হিন্দি, কীভাবে হন দক্ষ?

ভারতীয় অফিসারদের ভাষা প্রশিক্ষণ: তামিল থেকে হিন্দি, কীভাবে হন দক্ষ?

ভারতে ভাষা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে ইংরেজি সহজে গ্রহণ করা হলেও হিন্দি, বাংলা বা মালয়ালমের প্রতি প্রতিরোধ দেখা যায়। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একজন ম্যানেজারের সঙ্গে গ্রাহকের কন্নড় ভাষায় কথা বলা নিয়ে বিতর্ক হয়। এই ঘটনা অখিল ভারতীয় পরিষেবায় স্থানীয় ভাষা শিক্ষার প্রক্রিয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এলবিএসএনএএ-তে ভাষা প্রশিক্ষণ: লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এলবিএসএনএএ), মুসৌরিতে আইএএস, আইপিএস এবং আইএফএস অফিসারদের ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণের সময় স্থানীয় ভাষা শিক্ষা শুরু হয়। ক্যাডার বরাদ্দের পর অফিসারদের তাদের নির্ধারিত রাজ্যের ভাষা শিখতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, তামিলনাড়ুর কোনো অফিসারের উত্তরপ্রদেশ ক্যাডার হলে তাকে হিন্দি, আর উত্তরপ্রদেশের অফিসারের তামিলনাড়ু ক্যাডার হলে তাকে তামিল শিখতে হয়। কেরালা ক্যাডারের জন্য মালয়ালম শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া ও পরীক্ষা: ফাউন্ডেশন কোর্স (৩.৫ মাস) এবং ফেজ-১ প্রশিক্ষণে (৬ মাস) প্রায় ৮-১২ সপ্তাহ ধরে ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের দ্বারা ক্লাস, স্থানীয় সাহিত্য, সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। অফিসারদের ফাইল পড়া, লেখা, এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথোপকথনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের পর একটি সাধারণ পরীক্ষা নেওয়া হয়, যাতে বলা, লেখা, এবং অনুবাদ পরীক্ষা করা হয়। ব্যর্থ হলে পুনরায় পরীক্ষা দিতে হয়, তবে এমন ঘটনা বিরল। যদি কোনো অফিসার ইতিমধ্যে ভাষা জানেন, তবে তাকে প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষা দিতে হয় না।
ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ: ফেজ-২ প্রশিক্ষণের পর অফিসাররা তাদের ক্যাডার রাজ্যে যান, যেখানে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বিভিন্ন পদে কাজ করতে হয়। এই সময় তারা স্থানীয় সহকর্মী ও নাগরিকদের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে ভাষা শেখেন। কিছু রাজ্য সরকার অতিরিক্ত টিউটরের ব্যবস্থা করে। অফিসাররা স্থানীয় সংবাদপত্র, ওয়েবসাইট এবং মিডিয়া ব্যবহার করে ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।
উদাহরণ: উত্তরপ্রদেশের টিএন চতুর্বেদী কর্নাটক ক্যাডারে কন্নড় শিখে সেখানে উল্লেখযোগ্য কাজ করেন এবং পরে ভারতের সিএজি ও কর্নাটকের গভর্নর হন। কেরালার আইপিএস হরিকুমার বিহার ক্যাডারে হিন্দি ও স্থানীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করে রোল মডেল হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের আইএএস অর্পণ শর্মা তামিলনাড়ুতে তামিল শিখে গ্রামীণ পানীয় জল ও শিক্ষায় অবদান রেখেছেন। রেনু গোয়াল ও উমা মহেশ্বরী মতো অফিসাররা স্থানীয় ভাষা আয়ত্ত করে সফলভাবে কাজ করছেন।
অন্যান্য পরিষেবায় ভাষা প্রশিক্ষণ: এসএসসি, ব্যাঙ্কিং, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স বা রেলওয়ের মতো অখিল ভারতীয় পরিষেবাগুলোতে স্থানীয় ভাষা শিক্ষার কোনো কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা নেই। এসব ক্ষেত্রে অফিসাররা নিজ উদ্যোগে বা সহকর্মীদের সহায়তায় ভাষা শেখেন। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন মহাব্যবস্থাপক ভি এম ত্রিপাঠী জানান, ব্যাঙ্কগুলো উত্তর ভারতকে ‘এ’ ক্যাটাগরি হিসেবে বিবেচনা করে এবং অ-দক্ষিণী অফিসারদের তামিলনাড়ু বা কেরালায় ফিল্ডের পরিবর্তে আঞ্চলিক অফিসে পোস্টিং দেওয়া হয়। ব্যাঙ্ক অফ বড়োদার অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অভিষেক শ্রীবাস্তব বলেন, “আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না, তাই ভাষার সমস্যায় দক্ষিণ ভারতে কাজ করা কঠিন হয়।”
উপসংহার: এলবিএসএনএএ-তে আইএএস ও আইপিএস অফিসারদের জন্য স্থানীয় ভাষা শিক্ষার একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগে সক্ষম করে। তবে, অন্যান্য অখিল ভারতীয় পরিষেবায় এই ধরনের ব্যবস্থার অভাব ভাষাগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। অফিসারদের দক্ষতা ও উৎসর্গ ভাষার বাধা অতিক্রম করে জনসেবায় উদাহরণ স্থাপন করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *