দিল্লি হাইকোর্টের রায়: ধারা ৩৭৭-এর অধীনে বৈবাহিক বৈষম্য স্বীকৃত নয়, পতির বিরুদ্ধে মামলা খারিজ

দিল্লি হাইকোর্টের রায়: ধারা ৩৭৭-এর অধীনে বৈবাহিক বৈষম্য স্বীকৃত নয়, পতির বিরুদ্ধে মামলা খারিজ

দিল্লি হাইকোর্ট ১৩ মে, ২০২৫-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে বলেছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ধারা ৩৭৭ বৈবাহিক বৈষম্যকে (Marital Rape) স্বীকৃতি দেয় না। এই রায়ে একজন পতির বিরুদ্ধে তার পত্নীর সঙ্গে কথিত ‘অপ্রাকৃতিক যৌনতা’ (মৌখিক যৌনতা) সংক্রান্ত ধারা ৩৭৭-এর অধীনে নিম্ন আদালতের অভিযোগ গঠনের আদেশ খারিজ করা হয়েছে।

কোর্টের মূল পর্যবেক্ষণ:
বৈবাহিক সম্পর্কে ধারা ৩৭৭ প্রযোজ্য নয়: বিচারপতি স্বর্ণা কান্ত শর্মা বলেন, ধারা ৩৭৭, যা ‘অপ্রাকৃতিক অপরাধ’কে শাস্তিযোগ্য করে, বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, বিশেষত যখন আসাম্মতির অভিযোগ স্পষ্টভাবে অনুপস্থিত। বৈবাহিক সম্পর্কে যৌনতার জন্য ‘নিহিত সম্মতি’ (implied consent) ধরে নেওয়া হয়।

ধারা ৩৭৫-এর ব্যতিক্রম: ধারা ৩৭৫-এর ব্যতিক্রম ২-এর অধীনে, ১৮ বছরের বেশি বয়সী পত্নীর সঙ্গে পতির যৌন সম্পর্ক, এমনকি আসাম্মতি থাকলেও, ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয় না। কোর্ট বলেছে, এই ব্যতিক্রম ধারা ৩৭৭-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যার ফলে মৌখিক বা পায়ুপথের যৌনতাও বৈবাহিক সম্পর্কে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না।

নবতেজ সিং জোহর রায়ের প্রভাব: ২০১৮-এ সুপ্রিম কোর্টের নবতেজ সিং জোহর রায়ে সম্মতিসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যৌন সম্পর্ককে অপরাধমুক্ত করা হয়। এই ক্ষেত্রে, পত্নী স্পষ্টভাবে আসাম্মতির অভিযোগ না করায় ধারা ৩৭৭-এর অধীনে মামলা অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে।

পত্নীর অভিযোগে অসঙ্গতি: পত্নী একদিকে পতিকে ‘নপুংসক’ বলে অভিযোগ করেছেন, অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে অপ্রাকৃতিক যৌনতার অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া, তিনি পতি ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পর্ক ও অর্থ আদায়ের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। কোর্ট এই অভিযোগগুলোতে ‘অন্তর্নিহিত অসঙ্গতি’ (inherent contradictions) লক্ষ করেছে।

পতির যুক্তি: পতি দাবি করেন, তাদের বিবাহ আইনত বৈধ এবং বৈবাহিক সম্পর্কে সম্মতিসম্পন্ন যৌন কার্যকলাপের জন্য নিহিত সম্মতি ধরে নেওয়া হয়। তাই, ধারা ৩৭৭-এর অধীনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন অবৈধ। কোর্ট এই যুক্তি মেনে নিয়ে বলেছে, আসাম্মতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে ধারা ৩৭৭ প্রযোজ্য নয়।
কোর্টের রায়ের তাৎপর্য:
ধারা ৩৭৫ ও ৩৭৭-এর সম্পর্ক: কোর্ট বলেছে, ধারা ৩৭৫-এর ব্যতিক্রম বৈবাহিক সম্পর্কে যৌন কার্যকলাপকে (পায়ুপথ বা মৌখিক যৌনতা সহ) ধর্ষণের সংজ্ঞা থেকে বাদ দেয়। এই ব্যতিক্রম ধারা ৩৭৭-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ ২০১৩-এ ধারা ৩৭৫-এর সংশোধনের পর এটি অপ্রাকৃতিক যৌনতাকেও অন্তর্ভুক্ত করে।

আইনি সুরক্ষা হ্রাস: এই রায় পত্নীদের বৈবাহিক সম্পর্কে আসাম্মতিমূলক অপ্রাকৃতিক যৌনতার বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষা কমিয়ে দেয়। এটি ভারতীয় আইনে বৈবাহিক বৈষম্যের স্বীকৃতির অভাবকে পুনর্ব্যক্ত করে।

বিতর্ক: সিপিআই ও সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের মতো রাজনৈতিক দল এবং আইনজ্ঞরা বৈবাহিক বৈষম্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার দাবি জানিয়েছেন। ২০২২-এ দিল্লি হাইকোর্টে ধারা ৩৭৫-এর ব্যতিক্রমের বিরুদ্ধে মামলায় বিভক্ত রায় দেওয়া হয়েছিল, যা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

এক্স-এ প্রতিক্রিয়া: এক্স-এ পোস্টগুলোতে এই রায়কে কেউ ‘পুরুষদের জন্য ঐতিহাসিক’ বলে স্বাগত জানিয়েছে, আবার কেউ নারীদের আইনি সুরক্ষা হ্রাসের সমালোচনা করেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই রায় বৈবাহিক সম্পর্কে নারীদের অধিকারকে দুর্বল করে।” তবে, এই পোস্টগুলোর তথ্য যাচাই করা যায়নি।
উপসংহার: দিল্লি হাইকোর্টের এই রায় ভারতীয় আইনে বৈবাহিক বৈষম্যের অপরাধীকরণের অভাবকে পুনরায় তুলে ধরেছে। ধারা ৩৭৭-এর অধীনে পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ অবৈধ ঘোষণা করে কোর্ট বৈবাহিক সম্পর্কে নিহিত সম্মতির ধারণাকে প্রাধান্য দিয়েছে। তবে, এটি নারীদের অধিকার ও সম্মতির বিষয়ে বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে, যা সুপ্রিম কোর্টে চলমান মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *