গুরুগ্রাম কিডনি কেলেঙ্কারি: ডা. আমিতের গেস্ট হাউসে চলত অবৈধ অপারেশন, ডক্টর ডেথের সঙ্গে সংযোগ

দিল্লি পুলিশের হাতে ‘ডক্টর ডেথ’ খ্যাত দেবেন্দ্র শর্মার গ্রেপ্তারির পর গুরুগ্রাম কিডনি কেলেঙ্কারি এবং এর মূল হোতা ডা. আমিত কুমার আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডা. আমিত এই অবৈধ কিডনি বাণিজ্যের মূল পরিকল্পক ছিলেন, আর দেবেন্দ্র শর্মা ছিলেন তার সহযোগী। ২০০৭-০৮ সালে এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে যখন মুরাদাবাদের এক ব্যক্তি গুরুগ্রাম পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তার কিডনি অবৈধভাবে সরানো হয়েছে। এই অভিযোগের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে, আর ডা. আমিত ও তার ভাই জীবন কুমার তাদের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করে পালিয়ে যান।
২০০৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি নেপাল থেকে ডা. আমিতকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ তার নির্দেশে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিতে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজন আয়ুর্বেদিক ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করে, যাদের কারোরই সার্জারির যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা ছিল না। গুরুগ্রামের আদালত এই ডাক্তারদের ‘ঝোলাছাপ’ বলে অভিহিত করে। তদন্তে জানা যায়, ফরিদাবাদের একটি গেস্ট হাউসকে হাসপাতালের রূপ দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ডা. আমিত নিজে কিডনি সরিয়ে বিদেশি ক্লায়েন্টদের (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, গ্রিস) দেহে প্রতিস্থাপন করতেন। পুলিশের মতে, তিনি প্রতি ট্রান্সপ্লান্টে ৪০-৫০ লাখ টাকা আদায় করতেন, যার মধ্যে ৩০-৩৫ লাখ টাকা লাভ হতো।
এই র্যাকেট সাত বছর ধরে চলেছিল, যেখানে ডা. আমিত ও ডা. উপেন্দ্রের নেতৃত্বে দেবেন্দ্র শর্মার মতো সহযোগীরা বিহার, বাংলা, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি থেকে দরিদ্র মানুষদের চাকরি বা সরকারি প্রকল্পের প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলত। কিডনি সরানোর পর ভুক্তভোগীদের ২৫-৩০ হাজার টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হতো। তদন্তে প্রকাশ পায়, ১৯৯৮-২০০৪ সালের মধ্যে ৭৫০টির বেশি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়, যা ডা. আমিত সিবিআই তদন্তে স্বীকার করেছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের পর অসাবধানতার কারণে রোগীর মৃত্যুও হয়েছে।
গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, গ্রেটার নয়ডা ও মেরঠে ডা. আমিতের দুটি হাসপাতাল ও দশটির বেশি ল্যাব ছিল। সিবিআই তদন্তের পর ২০১৩ সালে গুরুগ্রামের আদালত তাকে ও তার সহযোগীদের সাত বছরের কঠোর কারাদণ্ড দেয়। “এই কেলেঙ্কারি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন,” বলেছেন সিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা। দেবেন্দ্র শর্মার গ্রেপ্তারি এই কুখ্যাত কেলেঙ্কারির পুনরালোচনার দাবি তুলেছে।