ট্রাম্পের ওভাল অফিসে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তুমুল তর্ক, শ্বেত নরসংহারের অভিযোগ

ট্রাম্পের ওভাল অফিসে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তুমুল তর্ক, শ্বেত নরসংহারের অভিযোগ

২১ মে ২০২৫-এ ওভাল অফিসে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসার সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রামাফোসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন ও ৩০% ট্যারিফ এড়াতে এই সফরে এসেছিলেন, কিন্তু ট্রাম্প তাঁকে শ্বেত আফ্রিকান কৃষকদের উপর ‘নরসংহার’ ও নস্লীয় বৈষম্যের মিথ্যা অভিযোগে আক্রমণ করেন। ট্রাম্প একটি ভিডিও প্রদর্শন করেন, যেখানে বিরোধী নেতা জুলিয়াস মালেমার ‘কিল দ্য বোয়ার’ গান ও শ্বেত কৃষকদের কবরস্থানের দৃশ্য দেখানো হয়, দাবি করে যে এটি ‘নরসংহারের প্রমাণ’। রামাফোসা শান্ত থেকে বলেন, এই ভিডিও সরকারি নীতির প্রতিনিধিত্ব করে না এবং অপরাধ সব জাতির মানুষকে প্রভাবিত করে, যার মধ্যে অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। তিনি বলেন, “আমি জানতে চাই এই দৃশ্য কোথায়, কারণ এটি আমি আগে কখনো দেখিনি।”

গল্ফ কানেকশন ও কৌশল: বৈঠকের শুরুতে রামাফোসা ট্রাম্পের গল্ফপ্রীতির সুযোগ নিয়ে দুই বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকান গল্ফার, আর্নি এলস ও রেটিফ গুসেন, এবং ধনকুবের জোহান রুপার্টকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। তিনি ট্রাম্পকে দক্ষিণ আফ্রিকার গল্ফ কোর্সের একটি ১৪ কেজি বই উপহার দেন। এলস বলেন, “দুই ভুল একটি সঠিক করে না,” এবং রুপার্ট জানান, অপরাধ শ্বেত কৃষকদের বাইরেও সবাইকে প্রভাবিত করে। রামাফোসা বাণিজ্য, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও মার্কিন এলএনজি ক্রয় নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেন, কিন্তু ট্রাম্পের ভিডিও প্রদর্শন বৈঠকের মূল বিষয়কে ছাপিয়ে যায়।

নস্লীয় বৈষম্য ও ভূমি সংস্কার: ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার আইনকে ‘শ্বেত-বিরোধী’ বলে সমালোচনা করেন, যা রঙ্গভেদের ঐতিহাসিক বৈষম্য সংশোধনের লক্ষ্যে ২০২৫ সালে পাস হয়। তিনি এই আইনের অধীনে শ্বেত কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়া ও হত্যার অভিযোগ তোলেন, যা রামাফোসা খারিজ করে বলেন, “আমাদের সংবিধান সকলের জমির অধিকার রক্ষা করে।” ট্রাম্পের প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকার সাহায্য বন্ধ, রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার ও ৫৯ জন শ্বেত আফ্রিকানকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করেছে, যা প্রিটোরিয়া ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ট্যারিফ ও বাণিজ্য ঝুঁকি: চীনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ট্রাম্পের ৩১% ট্যারিফ আরোপ ও আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট (AGOA) পুনর্নবীকরণের অনিশ্চয়তা দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতির জন্য হুমকি। রামাফোসা বাণিজ্য চুক্তি ও স্টারলিঙ্কের মতো প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেন, কিন্তু ট্রাম্প মার্কিন কো ম্পা নিগুলোর জন্য নস্লীয় বৈষম্য থেকে ছাড়ের দাবি তুলতে পারেন।

রামাফোসার প্রতিক্রিয়া: রামাফোসা শান্ত থেকে বলেন, “আমাদের বহুদলীয় গণতন্ত্র বিভিন্ন মত প্রকাশের অনুমতি দেয়, কিন্তু ভিডিওতে দেখানো মতামত সরকারি নীতি নয়।” তিনি বৈঠককে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, “আমরা নাটকীয়তা চাইনি, তাই সাংবাদিকদের হতাশ করেছি।” তাঁর কূটনৈতিক দক্ষতা, যা ১৯৯০-এর দশকে রঙ্গভেদের শান্তিপূর্ণ অবসানে প্রমাণিত, এই বৈঠকে তাঁকে সংযত ও মর্যাদাপূর্ণ রাখে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *