RBI-র সংকটমোচক ভূমিকা: গত ১০ বছরে সরকারকে কত টাকা দিয়েছে?

সরকারের সংকটে RBI-র সাহায্য: FY25-এ রেকর্ড ২.৬৯ লক্ষ কোটি টাকার ডিভিডেন্ড
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) কেন্দ্রীয় সরকারকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (FY25) জন্য রেকর্ড ২,৬৮,৫৯০.০৭ কোটি টাকার ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে, যা গত বছরের ২.১১ লক্ষ কোটি টাকার ডিভিডেন্ডের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এটি RBI-র ইতিহাসে সর্বোচ্চ ডিভিডেন্ড স্থানান্তর। এই স্থানান্তর ১৫ মে, ২০২৫-এ কেন্দ্রীয় বোর্ডের সভায় সংশোধিত ইকোনমিক ক্যাপিটাল ফ্রেমওয়ার্ক (ECF) এর ভিত্তিতে অনুমোদিত হয়েছে, যা বিমল জালান কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সালে গৃহীত হয়েছিল। কন্টিনজেন্সি রিস্ক বাফার (CRB) ৬.৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% করা হয়েছে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিফলিত করে।
RBI কোনো বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক না হলেও, এটি ওপেন মার্কেট অপারেশন, বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভ, এবং বিভিন্ন ফি ও চার্জের মাধ্যমে আয় করে। এই আয়ের একটি অংশ সরকারের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হয়। গত এক দশকে RBI সরকারের আর্থিক ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নিম্নে গত ১০ বছরে RBI-র সরকারকে দেওয়া ডিভিডেন্ডের তালিকা দেওয়া হল:
অর্থবছর
ডিভিডেন্ড (কোটি টাকায়)
FY15
৬৫,৮৯৬
FY16
৬৫,৮৭৬
FY17
৩০,৬৫৯
FY18
৫০,০০০
FY19
১,৭৫,৯৮৭
FY20
৫৭,১২৮
FY21
৯৯,১২২
FY22
৩০,৩০৭
FY23
৮৭,৪১৬
FY24
২,১০,০০০
FY25
২,৬৮,৫৯০.০৭
কীভাবে RBI এত বড় ডিভিডেন্ড দিয়েছে?
RBI-র আয়ের প্রধান উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে:
বিদেশি মুদ্রা লেনদেন: FY25-এ RBI $৩৯৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি এবং $৩৫৪ বিলিয়ন ক্রয় করেছে, যার মোট লেনদেন $৭৪০ বিলিয়ন। এটি থেকে আনুমানিক ২.২৫-২.৫ ট্রিলিয়ন টাকার ট্রেডিং লাভ হয়েছে।
বন্ড ও সিকিউরিটিজ থেকে সুদ: বিদেশি ও দেশীয় সিকিউরিটিজ থেকে সুদের আয় FY24-এ ১.৯ ট্রিলিয়ন টাকা থেকে FY25-এ ১.৭২ ট্রিলিয়ন টাকায় কিছুটা কমলেও এটি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
কম প্রভিশনিং: FY24-এ কন্টিনজেন্সি ফান্ডে ৪২,৮২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, যা FY23-এর তুলনায় ৬৭% কম। FY25-এ প্রভিশনিং বাড়লেও (১.৬৩ ট্রিলিয়ন টাকা), ট্রেডিং লাভ এই ডিভিডেন্ড সম্ভব করেছে।
সরকারের জন্য তাৎপর্য:
এই রেকর্ড ডিভিডেন্ড সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে, বিশেষ করে FY25-এ কর রাজস্ব বৃদ্ধি ৩.৬% (জুলাই ২০২৪-ফেব্রুয়ারি ২০২৫) কমে যাওয়ায় এবং বিনিয়োগ প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ায়। এটি সরকারকে ৫.১% জিডিপি’র আর্থিক ঘাটতি লক্ষ্য অর্জনে এবং অবকাঠামোগত ব্যয় বাড়াতে সহায়তা করবে। বাজারে ১০-বছরের বন্ড ইল্ড ৬.২২%-এ নেমে এসেছে, যা সরকারের ঋণ গ্রহণের খরচ কমাবে।
ঝুঁকি ও সমালোচনা:
কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, বড় ডিভিডেন্ড দীর্ঘমেয়াদে RBI-র আর্থিক স্থিতিশীলতা ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করতে পারে। FY25-এ কন্টিনজেন্সি ফান্ডে বেশি বরাদ্দ (১.৬৩ ট্রিলিয়ন টাকা) সত্ত্বেও, ঘন ঘন উচ্চ ডিভিডেন্ড স্থানান্তর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মূল উদ্দেশ্যগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
উপসংহার:
RBI গত এক দশকে সরকারের আর্থিক সংকটে সংকটমোচক হিসেবে কাজ করেছে। FY19 (১.৭৬ লক্ষ কোটি) এবং FY24-এর (২.১১ লক্ষ কোটি) রেকর্ড ডিভিডেন্ডের পর FY25-এ ২.৬৯ লক্ষ কোটি টাকার ডিভিডেন্ড অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন। তবে, দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে RBI-কে তার রিজার্ভ এবং প্রভিশনিং ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।