লখিমপুর খেরি হত্যা মামলা: নিসার জাহানের আজীবন কারাদণ্ড, অন্যরা খালাস

লখিমপুর খেরি হত্যা মামলা: নিসার জাহানের আজীবন কারাদণ্ড, অন্যরা খালাস

উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে ১৭ বছর আগে (২০০৮ সালে) একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে সাস নিসার জাহানকে তার দামাদ অকিল আহমেদকে জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ও সেশন বিচারক (এডিজে) দেবেন্দ্রনাথ সিং ২৩ মে, ২০২৫-এ নিসার জাহানকে (বর্তমানে ৮০ বছর বয়সী) আজীবন কারাদণ্ড এবং ২০,০০০ টাকা জরিমানার সাজা ঘোষণা করেছেন।

মামলার বিবরণ:
সিতাপুরের সুদামাপুরীর বাসিন্দা অকিল আহমেদ পিএসি (প্রাদেশিক সশস্ত্র কনস্টেবুলারি)-তে প্রধান কনস্টেবল ছিলেন। তার স্ত্রী শাহিন ওরফে রিঙ্কি, লখিমপুর খেরির সুন্দরবল গ্রামের এহতেশামের মেয়ে। শাহিন ও তার পরিবার অকিলের উপর পৃথক থাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। ২১ ডিসেম্বর, ২০০৭-এ শাহিন তার দেড় বছরের মেয়েকে কাঁধে নিয়ে আগুনের কাছে বসে ছিলেন, এবং দুর্ঘটনাবশত আগুনে পড়ে ঝলসে যান। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, এবং চিকিৎসায় অকিলের ব্যয়বহুল খরচ হয়।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮-এ শাহিনের অসুস্থতার অজুহাতে অকিলকে লখিমপুরে ডেকে আনা হয়। সেখানে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে দহেজের সমস্ত জিনিস সিতাপুর থেকে আনতে এবং শাহিনকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। অকিল তার ভাই খলিলকে ফোনে এই ঘটনা জানান। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মারধর করে এবং জ্বলন্ত পদার্থ ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করে। রাত ১২টার দিকে সিতাপুর কোতোয়ালি থেকে খলিলকে অকিলের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। লখিমপুরে পৌঁছে খলিল তার ভাইয়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ বাথরুমে দেখতে পান।
মামলার তদন্ত ও বিচার:
খলিল অকিলের শ্বশুর এহতেশাম, সাস নিসার জাহান, স্ত্রী শাহিন, শ্যালক আসলম-সহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তের পর এহতেশাম, নিসার জাহান, আসলম, আসলমের স্ত্রী জেবা, নাসরিন এবং জাভেদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। বিচার চলাকালীন এহতেশাম এবং আসলমের মৃত্যু হয়। অতিরিক্ত জেলা সরকারি কৌঁসুলি (এডিজিসি) সঞ্জয় সিং জানান, অভিযোগকারী পক্ষ ১১ জন সাক্ষী এবং প্রমাণ পেশ করে। এডিজে দেবেন্দ্রনাথ সিং নিসার জাহানকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন, তবে শাহিন, জেবা, নাসরিন এবং জাভেদকে প্রমাণের অভাবে খালাস দেওয়া হয়।
প্রভাব ও তাৎপর্য:
১৭ বছর পর এই রায় এই অঞ্চলে দহেজ-সংক্রান্ত সহিংসতা এবং পারিবারিক বিরোধের ফলে হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থার কঠোর অবস্থান তুলে ধরে। নিসার জাহানের বয়স এখন ৮০ বছর হলেও, আদালতের এই সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখায়। এই মামলাটি দহেজ এবং পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার উপরও আলোকপাত করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *