রাজনৈতিক সংকটে ইউনুস: পদত্যাগ না কি বিদ্রোহের পথ?

রাজনৈতিক সংকটে ইউনুস: পদত্যাগ না কি বিদ্রোহের পথ?

বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের মধ্যবর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস এক কঠিন সংকটের মুখে আছেন। সম্প্রতি এক পরামর্শক সভায় তিনি সরাসরি জানিয়েছেন যে, আর কতক্ষণ এই অবস্থায় থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি সত্যিই পদত্যাগ করবেন? পদত্যাগ করলে ‘কায়ের’ হিসেবে আখ্যায়িত হবার ভয়, আর থাকলে বিদ্রোহের ঝড় জেগে ওঠার সম্ভাবনা—এই দু’মুখী চাপে তিনি এখন অবিরাম দমবন্ধ পরিস্থিতিতে রয়েছেন।

মহত্বপূর্ণ এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট করেছেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন অবশ্যই হবে।” তাঁর এই বক্তব্য দেশের জন্য এক কঠোর সতর্কবার্তা। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশের স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচিত সরকারই অপরিহার্য। এই আল্টিমেটামের মধ্যেই ইউনুসের ভূমিকা সবচেয়ে নাজুক হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, ছাত্র সংগঠনগুলো, যারা শুরুতে ইউনুসের পক্ষপাতী ছিলেন, এখন তার উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, নির্বাচন এবং প্রশাসনিক সংস্কার না হলে তাদের সমর্থন থাকবে না। অর্থাৎ, দ্রুত নির্বাচন করানো না হলে নতুন বিপ্লবের আগুন ছড়াতে পারে।

রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলোও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং জামায়াত-ই-ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে যে, “নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া তারা রাজপথে নামবে।” এই চাপের মুখে ইউনুস নতুন জাতীয় সরকারের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছেন, তবে বিরোধীরা তা মানতে নারাজ।

সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শক সায়দা রিজভানা হাসান বলছেন, “তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের এগিয়ে নিতে হবে—নির্বাচন, সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ।” যদিও আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালও গঠন করা হয়েছে, তবে সহযোগিতা ব্যতীত এই প্রচেষ্টা অপূর্ণ থেকে যাবে।

একদিকে মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা ইউনুসকে পদত্যাগ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন, অন্যদিকে দেশের অস্থিরতার এই মুহূর্তে তাঁর নেতৃত্ব অপরিহার্য বলেও তারা মত দেন। বাংলাদেশের রাজনীতির এই সংকটময় সময়ে ইউনুসের প্রতিটি পদক্ষেপ দেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। পদত্যাগ করলে নিজের সমালোচনার ঝড় এড়াতে পারেন, আর থাকলে জনগণের স্বার্থে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এই রাজনৈতিক ভিড়ভিড়ির মধ্যে তাঁর পছন্দ এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *