সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ: কিশোরদের সম্মতিতে সম্পর্ক অপরাধে গোনা যাবে না, ২৫ জুলাই রিপোর্ট তলব

সুপ্রিম কোর্ট কিশোরদের মধ্যে সম্মতিমূলক সম্পর্ককে অপরাধের বাইরে নিয়ে আসার ব্যাপারে কেন্দ্রকে গুরুত্ব দিতে বলেছে। প্রধান বিচারপতি অভয় এস ওকা ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞার বেঞ্চ বুধবার কেন্দ্রের কাছে নোটিশ জারি করে, ‘Protection of Children from Sexual Offences Act (POCSO)’-এর আওতায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের সম্মতিতে গড়া সম্পর্কের জন্য কঠোর শাস্তি তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। আদালত পাশাপাশি কিশোরদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা নিয়ে একটি স্পষ্ট নীতি প্রণয়নের কথাও উল্লেখ করেছে।
এই মামলার সূত্রপাত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের এক কিশোরীর দুঃখজনক ঘটনার কারণে, যাকে ১৪ বছর বয়সে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের জন্য পোকসো আইনের অধীনে ২০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। আদালত, দুই সিনিয়র মহিলা আইনজীবী, মাধবী দিওয়ান ও লিজ ম্যাথিউকে এই বিষয়ে পরামর্শদাতা করে, যাঁরা কিশোরদের সম্মতিমূলক সম্পর্কেও সুরক্ষা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পোকসো আইনের মূল লক্ষ্য অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষা করা হলেও, কিশোর সম্পর্কের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের অতিরিক্ত কঠোরতা তাদের সর্বোত্তম স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে পারে। আদালত ২৫ জুলাই পর্যন্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের রিপোর্ট চাইবে এবং তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আইনি বিশ্লেষণ: পেনিট্রেশন মানেই একতরফা অপরাধ নয়
মাদ্রাস ও দিল্লি হাইকোর্ট সহ বিভিন্ন উচ্চ আদালত ইতিমধ্যেই পোকসো আইনের প্রয়োগে সূক্ষ্মতা অবলম্বনের কথা বলেছেন। বিশেষ করে মাদ্রাস হাইকোর্ট বলেছে, সম্মতিপূর্ণ ‘পেনিট্রেটিভ’ শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একতরফা ‘আক্রমণ’ অপরাধের ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত নয়। কলকাতা হাইকোর্টও একমত, যেখানে ‘পেনিট্রেশন’ শব্দের জন্য অভিযুক্তকে এককভাবে দোষী সাব্যস্ত না করার পরামর্শ দিয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের মামলা যেহেতু কিশোরদের ওপর গভীর মানসিক প্রভাব ফেলে, তাই প্রয়োজন সম্মতিপূর্ণ সম্পর্কগুলোকে অপরাধ থেকে পৃথক করার এবং কিশোরদের উপযুক্ত যৌন শিক্ষা দেওয়ার। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বাংলাদেশের মতো বৃহৎ সমাজে যৌন শিক্ষার প্রসার ও সুরক্ষিত পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পথ দেখাবে বলে মনে করা হচ্ছে।