ভারতের বহুভাষিক কণ্ঠ: অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্ব সাহিত্যের মঞ্চে

ভারতের বহুভাষিক কণ্ঠ: অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্ব সাহিত্যের মঞ্চে

অনুবাদ শুধু ভাষার সেতু নয়, এটি ভারতীয় সাহিত্যকে দেশে ও বিশ্বে নতুন প্রাণ দিয়েছে। ২০২৫ সালে কন্নড় লেখিকা বানু মুশতাক ও অনুবাদক দীপা ভাস্থি তাঁদের ছোটগল্প সংকলন Heart Lamp-এর জন্য আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতেছেন। ২০২২ সালে গীতাঞ্জলি শ্রী-র Ret Samadhi (Tomb of Sand, ডেইজি রকওয়েলের অনুবাদ) একই পুরস্কার জিতেছিল। এই সাফল্য ভারতের বহুভাষিক সাহিত্যের গভীরতা ও বৈচিত্র্য তুলে ধরে। Heart Lamp-এর কন্নড় থেকে ইংরেজি অনুবাদ “নতুন টেক্সচার ও বহু ইংরেজি” সৃষ্টি করেছে, যা বিশ্ব সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
অনুবাদের তাৎপর্য:
ভারতের ২২টি সরকারি ভাষা ও হাজারো উপভাষার দেশে অনুবাদ ভাষাগত দ্বীপগুলোকে সংযুক্ত করে। অরুণাভ সিনহা বলেন, “অনুবাদ ছাড়া ভারতের মানুষ নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারত না। এটি গণতন্ত্রের ভাষা।” Tomb of Sand ভারতে ৫০,০০০ ও ব্রিটেনে ৩০,০০০ কপি বিক্রি করে, যা অনুবাদের বাজার শক্তি দেখায়। পেরুমল মুরুগানের Pyre (অনিরুদ্ধন বাসুদেবের অনুবাদ) ও Fire Bird (জননী কান্নানের অনুবাদ) বিশ্বব্যাপী পাঠকদের কাছে পৌঁছেছে, যথাক্রমে বুকার লংলিস্ট ও জেসিবি পুরস্কার জিতেছে।
অনুবাদের চ্যালেঞ্জ:
অনুবাদ শুধু শব্দের রূপান্তর নয়, সংস্কৃতি, প্রেক্ষাপট ও আবেগের পুনর্সৃষ্টি। Pyre-এর তামিল ছন্দ বা Fire Bird-এর ‘অগ্মার্ক’ শব্দের স্থানীয় তাৎপর্য ইংরেজিতে পুরোপুরি ধরা কঠিন। গীতাঞ্জলি শ্রী বলেন, “অনুবাদ একটি নতুন জীবন সৃষ্টি, পুরোনো সংস্কৃতির নতুন অবতার।” Ret Samadhi-র শব্দ খেলা ও নব্য শব্দ ডেইজি রকওয়েলের অনুবাদে বিশ্ব পাঠকদের কাছে নতুন রূপে এসেছে।
বিশ্ব সাহিত্যে ভারত:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে Gitanjali-র স্ব-অনুবাদের মাধ্যমে প্রথম অ-ইউরোপীয় হিসেবে নোবেল জিতে ভারতীয় সাহিত্যের বিশ্ব মঞ্চ তৈরি করেন। সম্প্রতি এম মুকুন্দনের Delhi: A Soliloquy (ফৈথিমা ইভি ও নন্দকুমার কে-র অনুবাদ) দিল্লির জীবনের গভীর চিত্র তুলে ধরেছে। অনুবাদের মাধ্যমে টলস্টয়, মার্কেস বা হান কাং-এর মতো ভারতীয় লেখকরাও বিশ্ব সাহিত্যের অংশ হচ্ছেন।
অনুবাদের সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা:
অনুবাদে সাংস্কৃতিক সূক্ষ্মতা বা শব্দের মধ্যবর্তী নীরবতা হারিয়ে যায়। তবু, এটি ভারতের মৌখিক ঐতিহ্য, আঞ্চলিক লোককাহিনী ও অপ্রকাশিত উপভাষার সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে নিয়ে যেতে পারে। এডিথ গ্রসম্যান বলেন, “অনুবাদ সাহিত্যের স্বাস্থ্য ও প্রাণশক্তির জন্য অপরিহার্য।” ভারতের অগণিত গল্প এখনও তাদের অনুবাদকের অপেক্ষায়, যারা এগুলোকে আঞ্চলিক ক্রিপ্ট থেকে বিশ্ব মঞ্চে নিয়ে আসবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *