চিরযৌবন আর ভয়ঙ্কর অপরাধ: ‘কাউন্টেস ড্রাকুলা’ এলিজাবেথ বাথোরির অমানবিক রাজত্ব

ইতিহাসে সৌন্দর্য ও অমানবিকতার মিলন ঘটিয়ে এক জঘন্য অধ্যায় সৃষ্টি করেছিলেন এলিজাবেথ বাথোরি, যাকে ‘কাউন্টেস ড্রাকুলা’ নামেও ডাকা হয়। ১৫৬০ সালের ৭ আগস্ট হাঙ্গেরির ট্রান্সিলভেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করা এই অভিজাত নারী ৬০০ কুমারী মেয়ের রক্ত পান ও তাদের মাংস খেয়ে নিজের রূপ-যৌবন ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। ইতিহাসবিদদের মতে, তিনি শুধু রক্ত পান করতেন না, বরং কুমারীদের রক্তে স্নান করতেন এবং নৃশংস অত্যাচার চালিয়ে আসতেন। তাঁর স্বামী ফেরেন্স নাডাসডি, যিনি নিজেও অত্যাচারী সেনাপতি ছিলেন, তাকে এই অপকর্মে সহযোগিতা করতেন।
এলিজাবেথের শৈশব থেকেই নৃশংসতার সাক্ষী হওয়া এবং মানসিক অসুস্থতা তাঁর ভয়ংকর ব্যক্তিত্বের মূল কারণ বলে ধারণা করা হয়। তিনি কুমারী মেয়েদের বিভিন্ন শারীরিক অত্যাচার করতেন, তাদের ছোট খাঁচায় বন্দি করে শীতল জলতে রাখতেন এবং দাসদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালাতেন। তাঁর অমানবিকতা এতটাই প্রকট ছিল যে, একবার তিনি এক দাসীর মাংস কেটে রান্না করিয়ে তাকে খেতে বাধ্য করেছিলেন। ১৬০৩ সালে পুলিশের তদন্তের পর তাঁর অপরাধ প্রকাশ পায় এবং তাকে বন্দি করে রাখা হয়। বিচারকাণ্ডে তিনি শতাধিক হত্যা করেছেন বলে জানা গেলেও তাঁর নিজের ডায়েরিতে সংখ্যা ৬০০-রও বেশি উল্লেখ ছিল।
ইতিহাসবিদরা মনে করেন, এলিজাবেথের পরিবার এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিও তাঁর নির্মমতার কারণ ছিল। তাঁর ফুফু ক্লারা, যিনি কালো জাদুতে বিশ্বাসী ছিলেন এবং অসংখ্য নৃশংস কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এলিজাবেথকে উৎসাহিত করতেন। ১৬১৪ সালে বন্দি অবস্থায় ৫৪ বছর বয়সে মারা যান এই ভয়ংকর নারীর জীবন। এলিজাবেথ বাথোরির গল্প ইতিহাসে সৌন্দর্যের পিছনে লুকানো অন্ধকারের এক চিরন্তন স্মৃতি হয়ে আছে।