গাজায় বুলেট নয়, মায়ের কান্না: নেটান্যাহুর ‘সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান’-এর ফলাফল

গাজায় বুলেট নয়, মায়ের কান্না: নেটান্যাহুর ‘সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান’-এর ফলাফল

গাজা আবারো আগুনে ঝলসে উঠেছে। মিসাইল আকাশ কাঁপাচ্ছে, আর নিচে ছড়িয়ে পড়েছে শোকের ছায়া। এবার মারা গেছে তম্বুর নিচে লুকানো নির্দোষ শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ইসরায়েলি বিমান হামলা আবারো প্রমাণ করল, এই যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদেরই যারা হাতে অস্ত্র না নিয়ে শুধু প্রার্থনাই অবলম্বন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেটান্যাহুর ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতেও পৌঁছনো যাচ্ছে না, মৃতদেহগুলো একসাথে ব্যাগে বন্দী করা হচ্ছে। গাজার কেন্দ্রস্থল দীর আল-বালাহর কাছে শনিবার গভীর রাতে ইসরায়েলি মিসাইল হামলায় এক মা ও তার দুই ছোট সন্তান নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। উত্তর গাজার যখনলিয়া অঞ্চলে এক অন্য হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে দুই মহিলা ও এক শিশু রয়েছেন।

এক ডাক্তার ও তার পরিবারের করুণ অবস্থা
সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণের খান ইউনিস শহরে, যেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডঃ আলাঅ আল-নজ্জার তার ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জন হারিয়েছেন। তাদের বাড়ি শুক্রবার ইসরায়েলি মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে। ১১ বছর বয়সী ছেলে ও স্বামী গুরুতর আহত। শিশুদের পোড়া দেহ একসঙ্গে একটি বডি ব্যাগে হাসপাতালে আনা হয়, যা উপস্থিত সবাইকে স্তম্ভিত করে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে যুদ্ধবিরাম ভাঙার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩,৭৮৫ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করে এই অভিযান হামাস ধ্বংস এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে অপহৃত বন্দিদের মুক্তির লক্ষ্যে চলছে। তবে, সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছেন সাধারণ নারী, শিশু ও নিরীহ মানুষ।

ইসরায়েল দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজার খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল। আন্তর্জাতিক চাপে সীমিত পরিমাণ সাহায্য ছাড়পত্র মিলেছে। তবে জাতিসংঘ এই কঠোর নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলের পরিকল্পনা গাজার ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং দুই কোটির বেশি ফিলিস্তিনিকে ‘স্বেচ্ছায় স্থানান্তরিত’ করার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে, যা ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক সমাজ খণ্ডন করে দিচ্ছে। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এটিকে আন্তর্জাতিক নিয়মের উন্মুক্ত লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *