বিচার মিলবে কি? বালির অমানবিক আত্মহত্যা মামলার হারানো জট খুলতে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ

হাওড়ার বালির চাঞ্চল্যকর আত্মহত্যা মামলায় এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নতুন আশার আলো দেখছে পুত্রহারা পরিবার। বিচার ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা অটুট রাখতে শীর্ষ আদালত এই বিষয়টি পুনরায় কলকাতা হাই কোর্টে উত্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমানুল্লাহ ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের নির্দেশ অনুযায়ী, পরিবারের তরফে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে আবেদন জানালে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।
২০২১ সালে হাওড়ার বালিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি দেশজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। অভিযোগ উঠেছিল, ৩৫ বছর বয়সী যুবক আমন সাউ যখন দাম্পত্য কলহের জেরে গলায় ফাঁস লাগাচ্ছিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী নেহা শুক্লা তাঁকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টা করেননি। বরং, তিনি মোবাইলে স্বামীর আত্মহত্যার দৃশ্য ভিডিও করছিলেন। এই অমানবিক ঘটনা শুনে নাগরিক সমাজ তোলপাড় হয়ে যায়। আমন সাউয়ের আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত স্ত্রী নেহা শুক্লা গ্রেফতারও হয়েছিলেন। কিন্তু এক অজানা কারণে মামলাটি যেন হারিয়ে যায় এবং চল্লিশ দিন জেল খেটে নেহা জামিন পেয়ে যান।
ঘটনার প্রায় চার বছর পর সেই মামলারই ‘কেস রি-ওপেন’ হয়েছে। ছেলের রহস্যজনক মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আমনের বাবা জগন্নাথ সাউ। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বালি থানার পুলিশের কাছে মামলার কেস ডায়েরি-সহ যাবতীয় নথি তলব করেন। কিন্তু অভিযোগ, প্রায় তিন মাস কেটে গেলেও কোনও অগ্রগতি হয়নি; বালি থানার তরফে কেস ডায়েরি-সহ মোবাইল ফোন ও অন্যান্য নথির ফরেনসিক টেস্ট রিপোর্টও পুলিশ দাখিল করেনি। এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন মামলায় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপের এই নির্দেশ এসেছে। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ফলে আমনের পরিবার নতুন করে আশার আলো দেখছে ন্যায়বিচারের।
সন্তানহারা জগন্নাথ সাউয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে পুনরায় তদন্তের আবেদন পেশ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে হাওড়ার মঙ্গলাহাটের বস্ত্র ব্যবসায়ী আমনের সঙ্গে লিলুয়ার বাসিন্দা নেহার বিয়ে হয়েছিল। পরিবারের দাবি, বিয়ের কয়েক মাস পরেই তাঁদের দাম্পত্যে চিড় ধরে, যার নেপথ্যে ছিল হুগলির উত্তরপাড়ার এক যুবকের সঙ্গে নেহার পরকীয়া সম্পর্ক। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই গোলমাল হতো। আমন সাউয়ের পরিবার জানিয়েছে, নেহা প্রায়ই পার্টি করে অনেক রাতে বাড়ি ফিরতেন এবং আমনের থেকে জোর করে টাকা আদায় করতেন। ২০২১ সালের এপ্রিলের সেই রাতে অশান্তি চরমে উঠলে আমন গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন। জগন্নাথ সাউ দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন, পুত্রের অপমৃত্যুর প্রতিবিধান পেতে তিনি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করবেন।