কেন্দ্রকে ২.৬৯ লাখ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড, আরবিআইয়ের ‘অভাবনীয়’ লভ্যাংশের রহস্য কী?

কেন্দ্রকে ২.৬৯ লাখ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড, আরবিআইয়ের ‘অভাবনীয়’ লভ্যাংশের রহস্য কী?

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারকে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য রেকর্ড ২.৬৯ লাখ কোটি টাকা বার্ষিক ডিভিডেন্ড দেওয়ার ঘোষণা করেছে। মার্কিন ডলার বিক্রি এবং বিভিন্ন সিকিউরিটিজ থেকে অর্জিত সুদই এই বিপুল মুনাফার মূল কারণ বলে জানা গেছে। শুক্রবার (মে ২৩, ২০২৫) আরবিআই-এর কেন্দ্রীয় পর্ষদের ৬১৬তম বৈঠকে এই ডিভিডেন্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার সভাপতিত্ব করেছেন গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা।

সরকারের জন্য ডিভিডেন্ডের গুরুত্ব বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আরবিআইয়ের এই রেকর্ড ডিভিডেন্ড সরকারের জন্য এক বিশাল স্বস্তি এনেছে। বিশেষত, মার্কিন শুল্ক এবং পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান সংঘাতের কারণে প্রতিরক্ষা খাতে বর্ধিত ব্যয়ের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই অর্থ সরকারকে সাহায্য করবে। ইওয়াই ইন্ডিয়ার মুখ্য নীতি উপদেষ্টা ডি কে শ্রীবাস্তব এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “কোভিড মহামারীর পরবর্তী বছরগুলো থেকে আরবিআই ক্রমাগত সরকারকে আগের চেয়ে বেশি উদ্বৃত্ত অর্থ (surplus) হস্তান্তর করছে।” তিনি আরও জানান যে, আরবিআই ২০২৪-২৫ সালের জন্য তাদের কন্টিনজেন্ট রিস্ক বাফার (Contingent Risk Buffer) বার্ষিক ভিত্তিতে ৬.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করেছে। এত কিছুর পরেও এই বছর উদ্বৃত্ত হস্তান্তর বেড়েছে, যা আরবিআইয়ের শক্তিশালী আর্থিক অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।

কেয়ারএজ-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, যদিও এই ডিভিডেন্ড গত বছরের তুলনায় বেশি, তবে বাজারের প্রত্যাশা অনুযায়ী তিন লাখ কোটি টাকার বেশি হয়নি।

আরবিআইয়ের কাজ ও আয়ের উৎস ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই)-এর মূল উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন করা নয়, বরং কাজ করতে গিয়েই ব্যাংকটির মুনাফা হয়। যদিও ভারত সরকার আরবিআইয়ের মালিক, তবুও আইন অনুযায়ী ব্যাংকটি নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা ভোগ করে। তবে, প্রতি বছর আরবিআইয়ের মুনাফার একটি অংশ (ডিভিডেন্ড) সরকারের কাছে পৌঁছায়।

আরবিআইয়ের তিনটি প্রধান কাজ এবং আয়ের উৎস:

১. অর্থনীতি সামলানো: আরবিআইয়ের অন্যতম প্রধান কাজ হলো দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা। অর্থাৎ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন (গ্রোথ) বজায় রেখেও মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এর জন্য আরবিআই সুদ হার বাড়ায় বা কমায়। এর পাশাপাশি, ডলারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য স্থিতিশীল রাখাও এর কাজ। যখন ডলার সস্তা হয়, তখন আরবিআই তা কিনে নেয় এবং যখন দামি হয়, তখন বিক্রি করে। এর থেকেই তাদের লাভ হয়। টাকার পতন ঠেকাতে আরবিআই বাজারে ডলার বিক্রি করে মুদ্রাকে সমর্থন জোগায়। এটাই তাদের আয়ের অন্যতম বড় উৎস।

২. সরকারের ব্যাঙ্কার: আরবিআই ভারত সরকারের ব্যাংক হিসেবেও কাজ করে। সরকারের যখন অর্থের প্রয়োজন হয় (বিশেষ করে বাজেটের ঘাটতি পূরণের জন্য), তখন আরবিআই সরকারের পক্ষে বাজার থেকে ঋণ সংগ্রহ করে। এই কাজটি বন্ড বিক্রির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। যদি সরকার আরবিআই থেকে বেশি ডিভিডেন্ড পায়, তাহলে তাদের কম ঋণ নিতে হয়। এতে বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য সস্তায় ঋণ পাওয়ার পথ খুলে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মাসে আরবিআই সুদের হার কমাতে পারে, যার ফলে ঋণের ইএমআইও কমতে পারে।

৩. নোট ছাপানো: আরবিআই দেশে কাগজের নোট ছাপানোর একমাত্র কর্তৃপক্ষ। নোট ছাপানোর খরচ এবং তার প্রকৃত মূল্যের (যেমন ১০০ টাকার নোট) মধ্যে যে পার্থক্য, তা আরবিআইয়ের মুনাফায় যুক্ত হয়। যেমন, ১০ টাকা খরচ করে ১০০ টাকার নোট ছাপলে ৯০ টাকা লাভ হয়।

এগুলো ছাড়াও, আরবিআই বিদেশি বন্ড (যেমন মার্কিন বন্ড) এবং সোনায় বিনিয়োগ করে। সোনার দাম বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলেও লাভ বা ক্ষতি হয়। এই বিভিন্ন উৎস থেকে অর্জিত আয়ই আরবিআইকে সরকারের কাছে রেকর্ড পরিমাণ ডিভিডেন্ড হস্তান্তরে সক্ষম করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *