ক্রিমিয়ান-কঙ্গো জ্বর: জলবায়ুর প্রভাবে ইউরোপে ছড়ানোর আশঙ্কা!

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে নতুন নতুন রোগের বিস্তার ঘটছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বড় হুমকি। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে ‘ক্রিমিয়ান-কঙ্গো হেমোরেজিক ফিভার’ (CCHF), যা যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘মিরর’-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে এই মারাত্মক ভাইরাস দ্রুত যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সিসিএইচএফ একটি ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর, যা মূলত টিক্স নামক পরজীবী দ্বারা ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, এই রোগের মৃত্যুহার প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত, এবং এটি টিক বা আক্রান্ত প্রাণীর টিস্যুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এর প্রতিরোধ বা চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রতি সেকেন্ডে অন্তত দুজনের মৃত্যু হতে পারে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে, যা এর ভয়াবহতা নির্দেশ করে। বর্তমানে পূর্ব ইউরোপে এই রোগ দেখা যাচ্ছে এবং সম্প্রতি ফ্রান্সেও এর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে, যা যুক্তরাজ্যের জন্য আশঙ্কার কারণ।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাজ্যের উষ্ণ আবহাওয়া শুধু সিসিএইচএফ নয়, বরং রিফট ভ্যালি জ্বর, জিকা এবং ব্রেকবোন জ্বরসহ অন্যান্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারী বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর স্যার পিটার হরবি এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “জলবায়ু পরিবর্তন নির্দিষ্ট কিছু রোগ কোথায় কোথায় শনাক্ত হতে পারে তার মানচিত্র প্রকাশ করছে।” ডেঙ্গুর উদাহরণ টেনে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, ডেঙ্গু, যা একসময় কেবল দক্ষিণ আমেরিকান ও দক্ষিণ পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ ছিল, বর্তমানে ভূমধ্যসাগরেও ছড়িয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই অপ্রত্যাশিত প্রভাব জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বিজ্ঞানীরা দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় এড়ানো যায়।