ইউক্রেনের হামলায় রাশিয়ার ৪০ যুদ্ধবিমান ধ্বংস, রুশ বিমানঘাঁটিতে তোলপাড়

ইউক্রেনের হামলায় রাশিয়ার ৪০ যুদ্ধবিমান ধ্বংস, রুশ বিমানঘাঁটিতে তোলপাড়

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান সংঘাত এবার প্রযুক্তিগত যুদ্ধে মোড় নিয়েছে। রুশ শহরগুলোতে লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে ইউক্রেন এবার আগ্রাসী এবং অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থা SBU দাবি করেছে, তাদের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার ৪০টিরও বেশি যুদ্ধ ও বোমারু বিমান ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে অত্যাধুনিক এবং মূল্যবান বিমান A-50, Tu-95 এবং Tu-22M3 অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা পরিষেবা (SBU) ১ জুন দাবি করেছে যে, তারা একটি বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে রাশিয়ার অভ্যন্তরে অবস্থিত বিমানঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়ে ৪০টিরও বেশি কৌশলগত বোমারু বিমানকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম ‘দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-কে SBU-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, শত্রুদের বোমারু বিমানগুলো এখন গণহারে জ্বলছে। তারা আরও জানায়, এই অভিযানটি সেইসব বিমানের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে, যা প্রতি রাতে ইউক্রেনের শহরগুলোতে বোমা হামলা চালায়। হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার ইরকুটস্ক অঞ্চলের বেলায়া বিমানঘাঁটি, যা ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ৪,০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইরকুটস্কের গভর্নর ইগর কোবজেভ নিজেই এই হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন, যদিও তিনি বিস্তারিত তথ্য দেননি। একইসঙ্গে, মুরমানস্ক ওব্লাস্টের ওলেনিয়া বিমানঘাঁটিতেও আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে, যেখানে গভর্নর আন্দ্রে চিবিস ড্রোন হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন।

SBU জানিয়েছে, এই অপারেশনে রাশিয়ার A-50, Tu-95 এবং Tu-22M3 এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিমানগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। A-50 বিমানটি রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ফাইটার জেট সনাক্ত করতে ও লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে। এর মূল্য প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়ার কাছে এর সংখ্যা খুবই সীমিত। Tu-95 একটি পুরনো হলেও বিপজ্জনক বোমারু বিমান, যা পারমাণবিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। অন্যদিকে, Tu-22M3 একটি সুপারসনিক বোমারু বিমান, যা ৪,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে উড়তে পারে এবং এটিকে ভূপাতিত করার জন্য আমেরিকার প্যাট্রিয়ট বা ইউরোপীয় SAMP-T সিস্টেম প্রয়োজন। উভয় বিমানই ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে ব্যবহৃত হচ্ছিল। সম্প্রতি ইউক্রেন দাবি করেছিল যে তারা ৩,০০০ কিলোমিটার পাল্লার নতুন ড্রোন তৈরি করেছে, যদিও এর প্রযুক্তিগত বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এই হামলায় কিছু ছোট FPV ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভ্যান থেকে বিমানঘাঁটির কাছে থেকে উড্ডয়ন করা হয়েছিল। এটি স্পষ্ট করে যে ইউক্রেন এখন রুশ সীমান্তের গভীরে প্রবেশ করে নির্ভুল হামলা চালাতে সক্ষম। এই হামলা রাশিয়ার কৌশলগত সক্ষমতার ওপর গুরুতর আঘাত হেনেছে। A-50, Tu-95 এবং Tu-22M3 এর মতো বিমানগুলোর একযোগে ক্ষতি কেবল রাশিয়ার বিমান হামলা ক্ষমতাকে দুর্বল করবে না, বরং তাদের মনোবলকেও প্রভাবিত করবে। ইউক্রেন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা এখন কেবল আত্মরক্ষা নয়, বরং আক্রমণাত্মক অবস্থানে আছে এবং তাদের লক্ষ্য এখন কেবল সীমান্ত নয়, বরং রাশিয়ার অভ্যন্তর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *