তিয়ানমেন স্কোয়ারে এমন কী বলল আমেরিকা যে ‘ড্রাগন’ আগুন উগড়ে দিল, বলল – ‘বিকৃত করে উপস্থাপন করবেন না, নইলে…’

বেইজিং-এর তিয়ানমেন স্কোয়ারে (Tiananmen Square) ৪ জুন, ১৯৮৯ সালে যা ঘটেছিল, তা কেবল চীনের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য গণতন্ত্র এবং দমনের সংঘাতের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। হাজার হাজার ছাত্র এবং সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল।
এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সমাপ্তি হয়েছিল ট্যাঙ্ক এবং গুলির মাধ্যমে। তিয়ানমেন স্কোয়ারে বিক্ষোভ ১৫ এপ্রিল থেকে ৪ জুন ১৯৮৯ পর্যন্ত চলেছিল। পিএলএ (PLA – People’s Liberation Army) এর পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপে অনুমান করা হয় কয়েকশো থেকে হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তবে, আজ পর্যন্ত চীন সরকার মৃতের সংখ্যা সম্পর্কিত সঠিক তথ্য প্রকাশ করেনি। ঘটনার পর থেকে চীনে এই বিষয়ে আলোচনা, শিক্ষা বা মিডিয়া কভারেজ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গো রুবিও (Marco Rubio) তিয়ানমেন স্কোয়ারের ৩৬ তম বার্ষিকীতে বলেছেন যে, ৪ জুন যা ঘটেছিল, বিশ্ব তা কখনো ভুলবে না। তার এই বিবৃতিটি এমন একটি ঐতিহ্যকে সম্মান জানানোর প্রচেষ্টা ছিল, যা চীন বছরের পর বছর ধরে লুকানোর চেষ্টা করছে। তিনি সরাসরি চীনের বিরুদ্ধে তথ্য সেন্সর করার অভিযোগ করেছেন। রুবিও তিয়ানমেন স্কোয়ারে শহীদ হওয়া ছাত্রদের স্মরণ করেছেন, এবং আজো যারা মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছেন, তাদেরও উল্লেখ করেছেন।
চীনের তীব্র প্রতিক্রিয়া
চীন রুবিওর মন্তব্যকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গুরুতর হস্তক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান (Lin Jian) বলেছেন যে, এই বিবৃতিটি ঐতিহাসিক ঘটনাগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করার একটি ষড়যন্ত্র। চীন এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এই বিষয়ে চীনা সরকারের নীতি স্পষ্ট যে, তিয়ানমেনকে ভুলে যাওয়াটাই একমাত্র বিকল্প। উল্লেখ্য যে, চীনা ইন্টারনেট, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং মিডিয়া থেকে তিয়ানমেন সম্পর্কিত বিষয় সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছে।
তাইওয়ানের সোচ্চার ভূমিকা
তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি লাই চিং-তে (Lai Ching-te) তিয়ানমেনের স্মরণে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন যে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগ স্মরণ করি। গণতান্ত্রিক সমাজ সত্যকে সংরক্ষণ করে, যখন স্বৈরাচারী সরকার ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়। এই বিবৃতি স্পষ্টভাবে চীনের কমিউনিস্ট মতাদর্শ এবং তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ব্যবধানকে আবারও তুলে ধরেছে। অন্যদিকে চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ মনে করে এবং বলপূর্বক তাকে একত্রিত করার হুমকি দেয়। এর জন্য তারা বহুবার তাইওয়ানকে সরাসরি হুমকিও দিয়েছে।
হংকংয়ের নীরবতা এবং চাউ হ্যাং-তুং-এর অনশন ধর্মঘট
হংকং, যা একসময় তিয়ানমেন স্মরণের একমাত্র চীনা অঞ্চল ছিল, এখন সেখানেও জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর হয়েছে। প্রাক্তন আইনজীবী এবং কর্মী চাউ হ্যাং-তুং-কে (Chow Hang-Tung) প্রকাশ্য বিক্ষোভ আয়োজনের কারণে আটক করা হয়েছে। এই বছর তিনি জেলে ৩৬ ঘন্টার অনশন ধর্মঘট করে গণতন্ত্রের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।