পাকিস্তান আলাদা থেকেও এডিবি থেকে ৬৮০০ কোটির সাহায্য পেল?

পাকিস্তান আলাদা থেকেও এডিবি থেকে ৬৮০০ কোটির সাহায্য পেল?

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (Asian Development Bank) অর্থাৎ এডিবি (ADB) দ্বারা পাকিস্তানকে ৬,৮৬১ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা ভারতে একটি নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, এই ঘোষণাটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) এডিবি সভাপতি মাসাতসুগু আসাকাওয়া (Masatsugu Asakawa)-এর সাথে ১ জুনের বৈঠকের মাত্র তিন দিন পরে এসেছে।

এর মধ্যেই খবর এসেছে যে, পাকিস্তানকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস-বিরোধী কমিটির উপাধ্যক্ষ করা হয়েছে। এই সবকিছু এমন সময়ে ঘটছে যখন ভারতীয় সাংসদদের প্রতিনিধি দল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানী সফর করে ফিরে এসেছেন। এই প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকে উন্মোচন করতে বেরিয়েছিল।

এই সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি বিরোধী দলগুলিকে সরকারের বিদেশ নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ দিয়েছে। কংগ্রেস (Congress) এটিকে ‘বিশ্বগুরুর ডফলি’র পর্দাফাঁস আখ্যা দিয়ে দাবি করেছে যে, মোদী সরকারের কূটনীতি দুর্বল প্রমাণিত হয়েছে, কারণ এর আগেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund) পাকিস্তানকে ঋণ দিয়েছিল এবং তা থামাতে ভারত ব্যর্থ হয়েছিল।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক সাম্প্রতিক পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর আরও গভীর হয়েছে। এই হামলার জবাবে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর (Operation Sindoor) অধীনে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। এরপর ভারত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে।

ভারত সাতটি সর্বদলীয় সাংসদ প্রতিনিধি দলকে ৩৩টি বৈশ্বিক রাজধানীতে পাঠায়। এই সফরগুলির মূল উদ্দেশ্য ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অধীনে ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী নীতি পরিষ্কার করা এবং পাকিস্তান থেকে উৎপন্ন সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে ভারতের অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরা। সব মিলিয়ে তাদের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা। এই প্রতিনিধি দলগুলি ২৩ মে থেকে শুরু হওয়া ১০ দিনের সফরে বিভিন্ন দেশের নেতা ও কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে, যাতে সীমান্ত-পাড়ের সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার ভারতের দাবিকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা যায়। এই কূটনৈতিক উদ্যোগ পাকিস্তানের কথিত সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় করার জন্য ছিল।

এর মধ্যে, নিউইয়র্ক থেকে খবর এসেছে যে, জাতিসংঘে পাকিস্তানকে নিয়ে একটি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রায়শই ‘সন্ত্রাসবাদের বৈশ্বিক রপ্তানিকারক’ বলে পরিচিত পাকিস্তানকে ২০২৫ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তালেবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির (Taliban Sanctions Committee) সভাপতি করা হয়েছে। এটি পরিষদের সন্ত্রাস-বিরোধী কমিটির উপাধ্যক্ষ হিসাবেও কাজ করবে।

এডিবি (ADB) থেকে সাহায্য কেন?

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitharaman) এডিবি সভাপতি মাসাতো কান্দা (Masato Kanda) এবং ইতালির অর্থমন্ত্রীর সাথে দেখা করে পাকিস্তানকে দেওয়া আর্থিক সাহায্য বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন। এর সত্ত্বেও এডিবি দ্বারা পাকিস্তানকে ৬,৮৬১ কোটি টাকা সাহায্যের ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণাটি ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার উপর প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেসের যুক্তি যে, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের কার্যকারিতার অভাবকে দেখায়। কংগ্রেস দাবি করেছে যে, নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) বিশ্ব মঞ্চে ভারতের অনেক ক্ষতি করেছেন এবং তার বিদেশ নীতি কেবল ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা ও ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

মোদী সরকারের বিদেশ নীতিকে তার সমর্থকরা শক্তিশালী বলে থাকেন। তারা বলেন যে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তার কার্যকালে ভারত বৈশ্বিক মঞ্চে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের ১০ম থেকে ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করা, জি-২০ (G20) এর সভাপতিত্ব এবং অনেক দেশ থেকে উচ্চ সম্মান লাভ করা তার অর্জনগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, দাবি করা হয় যে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক স্তরে বিচ্ছিন্ন করতে ভারত কিছুটা হলেও সাফল্য অর্জন করেছে।

তবে, সমালোচকরা যুক্তি দেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতের কূটনীতি কিছু ক্ষেত্রে দুর্বল হয়েছে। নেপালে ক্রমবর্ধমান ‘অ্যান্টি-ইন্ডিয়া সেন্টিমেন্ট’ (Anti-India Sentiment) এবং তার চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া এর উদাহরণ। এডিবি এবং আইএমএফ-এর মতো বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভারতের প্রভাব সীমিত বলে মনে হয়, বিশেষ করে যখন পাকিস্তান এগুলি থেকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে।

এডিবি-র সাহায্য

পাকিস্তানের অর্থনীতি গভীর সংকটে রয়েছে, এবং সে বিশ্ব ব্যাংক (World Bank), আইএমএফ (IMF), এবং এডিবি (ADB)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। এডিবি দ্বারা দেওয়া ৬,৮৬১ কোটি টাকার সহায়তার উদ্দেশ্য সম্ভবত পাকিস্তানে অবকাঠামো বা অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলিকে সমর্থন করা। ভারতের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ এই ধরনের সহায়তার পরোক্ষভাবে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী অর্থায়নের জন্য ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে, এডিবি একটি বহুপাক্ষিক সংস্থা এবং এর সিদ্ধান্তগুলি অনেক দেশের স্বার্থ এবং নীতির উপর নির্ভর করে। ভারত, একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এডিবি-র প্রতিটি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে না। এর সত্ত্বেও এই প্রশ্ন তো উঠেই যে ভারতের প্রচেষ্টার কতটা প্রভাব পড়েছে।

এডিবি দ্বারা পাকিস্তানকে দেওয়া সহায়তা এবং আইএমএফ ঋণ নিয়ে ওঠা বিতর্ক ভারতের বিদেশ নীতির জটিলতাকে দেখায়। একদিকে, মোদী সরকার বৈশ্বিক মঞ্চে ভারতের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু অন্যদিকে, বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভারতের প্রভাব সীমিত বলে মনে হয়। এই ঘটনা ভারতের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে যে তাকে তার কূটনৈতিক কৌশলকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন, বিশেষ করে সেই ক্ষেত্রগুলিতে যেখানে তার কৌশলগত স্বার্থ প্রভাবিত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *