ঔষধ ছাড়াই লিভারের প্রতিটি রোগ থেকে মুক্তি… সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া প্রতিকার

ঔষধ ছাড়াই লিভারের প্রতিটি রোগ থেকে মুক্তি… সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া প্রতিকার

লিভার (Liver) শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহত্তম গ্রন্থি। এটি পেটের ডানদিকে নিচের অংশে অবস্থিত। লিভার শরীরের অনেক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। লিভার খারাপ হলে শরীরের কাজ করার ক্ষমতা কমে যায় এবং লিভারের ক্ষতির সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানোও জরুরি, অন্যথায় এটি একটি গুরুতর সমস্যায় পরিণত হতে পারে।

খারাপ অভ্যাসের কারণে লিভার খারাপ হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। যেমন – অতিরিক্ত মদ্যপান, অতিরিক্ত ধূমপান, বেশি টক খাওয়া, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ ইত্যাদি।

প্রথমে লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণগুলো জানা জরুরি। যাতে সময়মতো আপনি জানতে পারেন এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা হতে পারে। ভারতে দশটি বিপজ্জনক রোগের মধ্যে লিভারের রোগ একটি। প্রতি বছর প্রায় দুই লক্ষ মানুষ লিভারের সমস্যায় মারা যায়।

লিভার খারাপ হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কারণ:

  • দূষিত মাংস খাওয়া, নোংরা জল পান করা, অতিরিক্ত মশলাদার এবং চটকদার খাবার খাওয়া।
  • পানীয় জলে ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি থাকা।
  • শরীরে ভিটামিন বি-এর অভাব।
  • অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotic) ঔষধ অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করা।
  • বাড়ির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে সঠিক মনোযোগ না দেওয়া।
  • ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড (Typhoid) রোগে আক্রান্ত হওয়া।
  • রং মেশানো মিষ্টি এবং পানীয় ব্যবহার করা।
  • প্রসাধনী সামগ্রীর অতিরিক্ত ব্যবহার।
  • চা, কফি, জাঙ্ক ফুড (Junk Food) ইত্যাদির অতিরিক্ত ব্যবহার।

লিভার খারাপ হলে শরীরে এই লক্ষণগুলি দেখা যায়:

  • লিভারের জায়গায় চাপলে ব্যথা হওয়া।
  • বুকে জ্বালাপোড়া এবং ভারী অনুভব করা।
  • ক্ষুধা না লাগা, বদহজম হওয়া, পেটে গ্যাস হওয়া।
  • শরীরে অলসতা এবং দুর্বলতা।
  • লিভার বড় হয়ে গেলে পেটে ফোলাভাব দেখা দেয়, যা আপনি প্রায়শই স্থূলতা ভেবে ভুল করেন।
  • মুখের স্বাদ খারাপ হওয়া। ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক চিকিৎসার মাধ্যমে লিভার সুস্থ করার উপায়:

এই প্রতিকারগুলির মাধ্যমে লিভারের সমস্ত কাজ সম্পূর্ণরূপে সঠিক ভাবে কাজ করতে শুরু করে। লিভারকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে টক্সিন (Toxins) ভাইরাস। তাই লিভারের চিকিৎসা করার আগে রোগীর রক্ত ​​পরিষ্কার হওয়া জরুরি যাতে লিভারে জমা দূষিত পদার্থ নষ্ট হতে পারে এবং লিভারের উপর চাপ কমতে পারে। তাই রোগীর অতিরিক্ত বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।

প্রাকৃতিক চিকিৎসা কিভাবে করবেন?

সকালে উঠে খোলা বাতাসে গভীর শ্বাস নিন। সকালে উঠে কয়েক কদম হাঁটুন এবং হাঁটতে হাঁটতেই খোলা বাতাসে গভীর শ্বাস নিন। আপনি উপকার পাবেন।

সপ্তাহে একবার পুরো শরীরে সরিষার তেল মালিশ করুন। সপ্তাহে একবার পুরো শরীরে মাটির প্রলেপ অবশ্যই লাগান। আপনি সপ্তাহে একবার বাষ্প স্নানও করতে পারেন। সান বাথও (Sun Bath) করতে পারেন।

  • হলুদের ব্যবহার: লিভারের রোগ নিরাময়ে হলুদ একটি প্রাকৃতিক ঔষধ। হলুদ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) হিসেবে কাজ করে। সকালে বা রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ হলুদ এক গ্লাস দুধে গুলে খেলে লিভারের সমস্যায় উপশম হয়।
  • পেঁয়াজ: লিভার সিরোসিস (Liver Cirrhosis) অর্থাৎ লিভারের সংকোচন হলে ১০০-১০০ গ্রাম পেঁয়াজ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • আপেল সিডার ভিনেগার: আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar) প্রতিদিন পান করলে লিভারের রোগ নিরাময় হয়।
  • তিসি: লিভারের রোগে তিসি সেবনও বেশ উপকারী। তিসি দানাদার হওয়া পর্যন্ত পিষে নিন। এবং এটি আটার সাথে মিশিয়ে বা সালাদে দিয়ে সেবন করলে লিভারের প্রতিটি রোগ সেরে যায়।

আহার চিকিৎসা: লিভার সংক্রান্ত রোগ দূর করতে আহার চিকিৎসাও জরুরি। অর্থাৎ কী খাবেন এবং কতটা পরিমাণে খাবেন তা জানাও জরুরি। লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই খাবারগুলি গুরুত্বপূর্ণ।

লিভারের রোগে জুস (Juice) সেবন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। লিভারের রোগীকে ডাবের জল, বিশুদ্ধ আখের রস, অথবা মুলোর রস নিজের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পালং শাক, পটল, লাউ, শালগম, গাজর, কুমড়ো-এর রসও আপনি নিতে পারেন।

দিনে ৩ থেকে ৪ বার আপনি লেবুর জল সেবন করুন। সবজির স্যুপ পান করুন, পেয়ারা, তরমুজ, নাশপাতি, মৌসুমী, বেদানা, আপেল, পেঁপে, আলু বোখারা ইত্যাদি ফল সেবন করুন।

সবজির মধ্যে পালং শাক, কলমি শাক, লাউ, ঝিঙ্গা, শালগম, আমলকী ইত্যাদির সেবন আপনার খাবারে যত বেশি সম্ভব করুন। সালাদ, অঙ্কুরিত ডালও যত বেশি সম্ভব গ্রহণ করুন। ভাপে রান্না করা বা সেদ্ধ খাবার সেবন করুন।

লিভারের রোগ দূর করতে আপনি এই জিনিসগুলির সেবন যত বেশি সম্ভব করুন।

জাম লিভারের রোগ দূর করতে সহায়ক। প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পর্যন্ত জাম সেবন করুন। আপেল সেবন করলেও লিভারের শক্তি বাড়ে। আপেলও যত বেশি সম্ভব সেবন করুন। গাজরের স্যুপও লিভারের রোগ দূর করতে সহায়ক। যদি লিভারে ফোলা থাকে তবে তরমুজ বেশি করে ব্যবহার করুন। পেঁপেও লিভারকে শক্তি দেয়।

আমলকী ভিটামিন সি (Vitamin C)-এর অন্যতম উৎস এবং এটি সেবন করলে লিভার আরও ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করে। লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য আপনার দিনে ৪-৫টি কাঁচা আমলকী খাওয়া উচিত। একটি গবেষণা প্রমাণ করেছে যে আমলকীতে লিভারকে সুরক্ষিত রাখার সমস্ত উপাদান রয়েছে।

লিভারের রোগের চিকিৎসার জন্য যষ্টিমধু একটি কার্যকর বৈদিক ঔষধ। যষ্টিমধুর শিকড় গুঁড়ো করে ফুটন্ত জলে মিশিয়ে দিন। তারপর ঠান্ডা হলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিন। এই চা-সদৃশ জল দিনে একবার বা দু’বার পান করুন।

পালং শাক এবং গাজরের রসের মিশ্রণ লিভার সিরোসিসের জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী ঘরোয়া প্রতিকার। গাজরের রস এবং পালং শাকের রস সমান অংশে মিশিয়ে পান করুন। লিভার সুস্থ রাখতে এই প্রাকৃতিক রস প্রতিদিন অন্তত একবার পান করুন। আপেল এবং পাতাসমৃদ্ধ সবজিতে থাকা পেকটিন (Pectin) হজমতন্ত্রে জমা বিষ থেকে লিভারকে রক্ষা করে।

কিভাবে লিভারের সুরক্ষা করবেন:

লিভারকে রক্ষা করার জন্য আপনাকে এই সহজ কাজগুলি করতে হবে এবং পুরো নিয়ম মেনে করতে হবে। কারণ লিভার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই আপনাকে আপনার জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে আপনি লিভারের রোগ থেকে বাঁচতে পারেন।

যখনই আপনি সকালে উঠবেন, ৩ থেকে ৪ গ্লাস জল অবশ্যই পান করুন। তারপর আপনি পার্কে হাঁটুন। দিনে সম্ভব হলে ২ থেকে ৩ বার লেবুর জল পান করুন। লিভারকে সুস্থ রাখতে শারীরিক কাজও করতে থাকুন। কখনই খাবার খাওয়ার সময় জল সেবন করবেন না এবং খাবার খাওয়ার ১ ঘন্টা পরেই জল পান করুন। চা, কফি ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। কোনো ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না। ভাজা খাবার থেকে দূরে থাকুন। এর সাথে জাঙ্ক ফুড (Junk Food), প্যাকেজড (Packaged) খাবার সেবন করবেন না।

অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম (Anulom Vilom Pranayama), ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম (Bhastrika Pranayama) সকালে অবশ্যই করুন। এই সমস্ত বিষয়গুলি মনে রাখলে আপনি লিভারের রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকবেন।

লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করুন। খাবার খাওয়ার আগে আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে মেদ কমে। এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস জলে মেশান এবং এতে এক চামচ মধুও মেশান। এই মিশ্রণটি দিনে দুই বা তিনবার পান করুন।

আমলকীও লিভারের রোগ নিরাময় করে। তাই লিভার সুস্থ রাখতে দিনে ৪ থেকে ৫টি কাঁচা আমলকী খাওয়া উচিত।

লিভার সুস্থ রাখার অন্যান্য উপায়:

  • সেদ্ধ বা বোতলজাত জল বেশি পরিমাণে পান করতে থাকুন।
  • নিজেকে নিজে কোনো ঔষধ খাবেন না।
  • অ্যালকোহল (Alcohol) সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করুন।
  • ভাজা খাবার খাবেন না।
  • সবুজ পাতাসমৃদ্ধ সবজি খান।

লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য খাদ্যের সময়:

এটি জানা জরুরি যে কোন সময় কী খেতে হবে যাতে লিভারের রোগ নিরাময় হতে পারে।

  • খাবার তখনই খান যখন আপনার ক্ষুধা লাগে। এবং কেবল ক্ষুধার চেয়ে বেশি খাবেন না।
  • রাতের খাবারে সবজি, প্রোটিন (Protein) এবং স্টার্চ (Starch) জাতীয় জিনিস অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • মধু এবং গুড় সেবন করলেও লিভারের রোগে আরাম পাওয়া যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *