গঙ্গা আমাদের মা, তবে কেন আজ তিনি অবহেলিত?

আজ গঙ্গা দশেরা। আজকের দিনে দেবী গঙ্গা মর্ত্যলোকে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কথিত আছে, রাজা ভগীরথের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে গঙ্গা পৃথিবীতে আসতে রাজি হন। কিন্তু ব্রহ্মার কমণ্ডলু থেকে নির্গত হওয়ার সময় তাঁর এতটাই বেগ ছিল যে, পৃথিবী তা ধারণ করতে পারত না। তাই শিব তাঁর জটা খুলে গঙ্গাকে ধারণ করেন। এরপর ভগীরথের প্রার্থনায় শিবের জটা থেকে গঙ্গা পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষদের মোক্ষ দান করেন। এই পৌরাণিক কাহিনীর মধ্য দিয়ে গঙ্গা আমাদের কাছে এক পবিত্র নদী রূপে প্রতিষ্ঠিত।
গঙ্গা আমাদের মা, তবে কেন আজ তিনি অবহেলিত?
আজ গঙ্গা দশেরা, মা গঙ্গা এই দিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি আজও পবিত্র, কিন্তু আমাদের অবহেলায় আজ তিনি ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। পুরাণ অনুসারে, শিবের জটা থেকে নির্গত হওয়ার পর গঙ্গা পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছিলেন রাজা ভগীরথের কঠোর তপস্যায়। দেবপ্রয়াগে ভাগীরথী ও অলকানন্দার সঙ্গমস্থলে গঙ্গার জন্ম। হিমালয়ের কন্দরে এক কিশোরীর মতো চঞ্চল গতিতে বয়ে আসা এই নদী ঋষিকেশ থেকে শান্ত রূপ ধারণ করে গঙ্গা সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দীর্ঘ যাত্রায় গঙ্গা শুধুমাত্র ভগীরথের পূর্বপুরুষদেরই নয়, কোটি কোটি মানুষের পূর্বপুরুষদের মোক্ষ দান করেছেন।
গঙ্গা স্নানকে হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়। প্রতিটি তিথি-নক্ষত্রে, বিশেষ করে অমাবস্যা, পূর্ণিমা, এবং শ্রাবণে গঙ্গা স্নানের মাহাত্ম্য অপরিসীম। এমনকি শিব পূজাও গঙ্গাজল ছাড়া আসাম্পূর্ণ বলে বিশ্বাস করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই পবিত্র নদী আজ আমাদের দ্বারাই দূষিত। গোমুখ থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত গঙ্গার জল আজ আর দূষণমুক্ত নয়। আধুনিক পর্যটকদের বিবেকহীন আচরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য, মানব বর্জ্য, এবং শিল্প কারখানার নোংরা জল গঙ্গাকে বিষাক্ত করে তুলছে।
৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবং গঙ্গা দশেরা একই দিনে পড়েছে। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, গঙ্গা ও যমুনার মতো নদীগুলি আজ প্লাস্টিক দূষণ, মানব বর্জ্য, এবং শিল্প বর্জ্যের ভারে জর্জরিত। বারবার প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার আইন তৈরি হলেও তা বাস্তবায়িত হয় না। কানপুরের মতো শহরগুলিতে একসময় যেখানে স্বচ্ছ গঙ্গাজল বইত, সেখানে আজ কালো, দুর্গন্ধযুক্ত জল আর পশুর দেহ ভেসে বেড়ায়। এলাহাবাদে যমুনার সাথে মিলিত হওয়ার পর গঙ্গার প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেও, এর পবিত্রতা প্রতিনিয়ত কমছে। এই গঙ্গা দশেরায়, আসুন আমরা সকলে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত রাখার শপথ নিই, তবেই আমাদের গঙ্গা সেবা সার্থক হবে।