ভারতের ‘আঘাতের’ জের, জলসঙ্কটে দিশেহারা পাকিস্তান!

ভারত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার পর পাকিস্তান প্রথমে চোখ রাঙানোর চেষ্টা করেছিল। হুমকি দিয়েছিল যে তারা ভারতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থার দ্বারস্থ হবে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা বুঝতে পারছিল যে ভারত কোনো চাপের মুখে পড়বে না এবং সিন্ধু জল চুক্তি কার্যকর করবে না। ফলে, পাকিস্তান জলসঙ্কট মোকাবিলায় নিজেদের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
পাকিস্তান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কর্মকর্তাদের ডায়মার-ভাষা বাঁধ নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সাথে, বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছিলেন। পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (PMO) থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তানের আত্মনির্ভরশীলতা সস্তা বিদ্যুৎ এবং কৃষির সাথে জড়িত, আর এর জন্য জল সংরক্ষণ এবং জলের সঠিক ব্যবহার বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। পেশোয়ারে কোর হেডকোয়ার্টারে একটি বৈঠকের সময় এই সমস্ত আলোচনা হয়েছিল। এই বৈঠকে শাহবাজ শরিফ ভারত সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী জলের প্রতিটি ফোঁটার ওপর পাকিস্তানিদের অধিকার রয়েছে, অর্থাৎ তিনি ভারতের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য অব্যাহত রেখেছিলেন।
যদিও শাহবাজ শরিফও জানতেন যে ভারতকে মন্দ কথা বললে পরিস্থিতি বদলাবে না। দেশের ভেতরেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এই কারণেই শরিফ এই বাঁধ প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে জল সংরক্ষণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোরও কথা বলা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিলেও, সেখানেই উপস্থিত তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী আহসান ইকবাল তহবিলের ঘাটতির বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। সেই বছর পাকিস্তানের সরকার জল ও শক্তি উভয় খাতেই বাজেট বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছিল। জল খাতে বরাদ্দ ১৩৫ বিলিয়ন রুপি থেকে কমিয়ে ১০৯ বিলিয়ন রুপি করা হয়েছিল। একইভাবে, শক্তি খাতে ১৬৯ বিলিয়ন রুপি থেকে কমিয়ে ১৪৪ বিলিয়ন রুপি করা হয়েছিল, অথচ এই বাঁধের খরচ ক্রমাগত বাড়ছিল।
ডায়মার-ভাষা বাঁধ সিন্ধু নদের উপরেই তৈরি হচ্ছে। এটি খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের কোহিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তানের ডায়মার জেলার মাঝে তৈরি করা হচ্ছে। এর ভিত্তিপ্রস্তর ১৯৮৮ সালে স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু কাজ এখনও শেষ হয়নি। এমনকি ২০২০ সালে পাকিস্তান এই বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য চীনা কো ম্পা নিগুলোর সাথে একটি যৌথ উদ্যোগও তৈরি করেছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং আইএমএফ-এর মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো পাকিস্তানকে এর জন্য তহবিল দিতে রাজি নয়, কারণ এটি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে (POK) তৈরি করা হচ্ছে যা ভারতের অংশ। তারা বিতর্কিত স্থানে তৈরি হওয়া বাঁধে অর্থ বিনিয়োগ করতে চায় না।