এবার জনগণনায় কোন প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করা হতে পারে? ভারতে জনসংখ্যা গণনা কীভাবে হয়?

দেশে ২০২১ সাল থেকে স্থগিত থাকা জনগণনার তারিখ ঘোষিত হয়েছে। এবার জনগণনার কাজ দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হবে। জনগণনার প্রথম পর্যায় ২০২৬ সালের ১লা অক্টোবর থেকে শুরু হবে। এই সময় দেশের পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের গণনা করা হবে। এরপর জনগণনার দ্বিতীয় পর্যায় ২০২৭ সালের ১লা মার্চ থেকে শুরু হবে, যেখানে সমতল অঞ্চলের মানুষের গণনা করা হবে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এবার জনগণনায় জাতিগত তথ্যও অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম জাতিভিত্তিক জনগণনা পরিচালিত হবে। দেশে শেষ জনগণনা ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জনগণনা প্রতি ১০ বছর অন্তর পরিচালিত হয়, সেই হিসেবে ২০২১ সালে পরবর্তী জনগণনা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এটি স্থগিত করা হয়েছিল। আসুন জেনে নিই জনগণনা কীভাবে হয় এবং এতে কোন কোন তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
ভারতে জনগণনা ‘জনগণনা আইন, ১৯৪৮’ এর অধীনে পরিচালিত হয়। এই আইন জনগণনাকে আইনি ভিত্তি প্রদান করে। জনগণনা ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং জনগণনা কমিশনার দ্বারা পরিচালিত হয়। ‘জনগণনা আইন, ১৯৪৮’ শেষবার ১৯৯৪ সালে সংশোধন করা হয়েছিল। এই আইন কেন্দ্রীয় সরকারকে নাগরিকদের কাছ থেকে ফর্মের উল্লেখিত বিবরণ চাওয়ার অধিকার দেয়। এই আইনের ধারা ৮ অনুযায়ী, জনগণনা কর্মকর্তারা এমন সমস্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারবেন, যা জিজ্ঞাসা করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই জাতিভিত্তিক জনগণনার জন্য এই আইনে সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে না।
ভারতের জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবি ও প্রস্তুতি দেশে জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবি দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছিল। এই দাবি পূরণ করার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকার এই বছর ৩০শে এপ্রিল নিয়েছিল। জনগণনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেশের উন্নয়ন নীতি প্রণয়নে নতুন দিশা দেবে। এর সাথে এই তথ্যগুলো নতুন রাজনীতিকেও জন্ম দেবে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী (ওবিসি)-কে প্রাপ্ত সংরক্ষণের উপর। এই কারণে সরকার জনগণনায় জাতি কলাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রথমে জাতিগুলির একটি তালিকা তৈরি করবে। এই তালিকা চূড়ান্ত করার আগে সরকার রাজনৈতিক দলগুলির মতামতও জানতে চাইতে পারে। বর্তমানে তফসিলি জাতি (SC) এবং তফসিলি উপজাতি (ST)-এর তালিকা রয়েছে। সে অনুযায়ী তফসিলি জাতিতে ১,২৭০টি জাতি এবং তফসিলি উপজাতিতে মোট ৭৪৮টি জাতি রয়েছে। তবে ওবিসি জাতিগুলিকে নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে, যা দূর করার চেষ্টা করা হবে। সরকার এর প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয় একটি বৈঠক করে এটি স্থির করেছে। জাতিগত জনগণনার জন্য সামাজিক ন্যায় মন্ত্রণালয় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবে।
২০১১ সালের জনগণনায় কী কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল? ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত জনগণনার ফর্মে এই ধরনের কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:
- ব্যক্তির নাম
- পরিবারের প্রধানের সাথে সম্পর্ক
- লিঙ্গ
- জন্মতারিখ এবং বয়স
- বর্তমান বৈবাহিক অবস্থা
- বিয়ের সময় বয়স
- ধর্ম
- সম্প্রদায়
- তফসিলি জাতি বা উপজাতি
- প্রতিবন্ধকতা
- মাতৃভাষা
- অন্যান্য কোন ভাষার জ্ঞান
- সাক্ষরতার অবস্থা
- বর্তমান শিক্ষাগত অবস্থা
- সর্বোচ্চ শিক্ষা
- গত বছরের কর্মসংস্থান
- অর্থনৈতিক কার্যকলাপের শ্রেণী
- কর্মসংস্থান
- শিল্পের প্রকৃতি, কর্মসংস্থান এবং পরিষেবা
- শ্রেণী
- অ-অর্থনৈতিক কার্যকলাপ
- কেমন কর্মসংস্থান চান
- কর্মস্থলে যাওয়ার মাধ্যম (একতরফা দূরত্ব এবং ভ্রমণের মাধ্যম)
- জন্মস্থান (যদি অন্য দেশে হয় তবে তার নাম)
- জন্মস্থানে আছেন নাকি স্থানান্তরিত হয়ে এসেছেন (যদি ভারতে স্থানান্তরিত হয়ে থাকেন এবং কখন স্থানান্তরিত হয়েছেন)
- স্থানান্তরের কারণ
- কতজন সন্তান (পুত্র ও কন্যার সংখ্যা)
- কতজন জীবিত সন্তান (পুত্র ও কন্যার সংখ্যা)
- গত এক বছরে কতজন সন্তান জন্ম নিয়েছে
- স্থানান্তরের পর নতুন স্থানে কত বছর ধরে আছেন
- স্থানান্তরের পূর্বের জন্মস্থান
ভারতে গৃহহীন মানুষের গণনা দেশে অনেক মানুষ গৃহহীন। এই লোকেরা রাস্তা, মোড় এবং শহরে বসবাস করে। জনগণনায় এদেরও গণনা করা হয়। ২০১১ সালের জনগণনায় ২৮ ফেব্রুয়ারি একদিনে এমন গৃহহীন মানুষের গণনা হয়েছিল। গৃহহীনদের গণনা রাতে করা হয়। সেই রাতে জনগণনা সমীক্ষকরা রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড এবং অন্যান্য জায়গায় গিয়ে গৃহহীনদের গণনা করেন। সরকার এখনও বিস্তারিতভাবে পরবর্তী জনগণনা সম্পর্কে জানায়নি, তাই এইবার গৃহহীনদের গণনা কীভাবে করা হবে তা এখনও জানা যায়নি।
ঘন জঙ্গলে বসবাসকারী উপজাতিদের গণনা দেশের তফসিলি উপজাতির অনেক মানুষ এখনও ঘন জঙ্গলে বসবাস করেন। জনগণনায় তাদের গণনাও জরুরি। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মতো এলাকায় এমন উপজাতি রয়েছে যারা অন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখে না। সরকার তাদের সাথে সাধারণ মানুষের মেলামেশায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই লোকেদের গণনার জন্য ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। সরকারি কর্মকর্তারা নৌকায় কিছু খাবার এবং কাপড় রেখে পাঠিয়ে দেন। যখন এই নৌকাগুলি তীরে পৌঁছায়, তখন এই আদিবাসীরা সেই জিনিসগুলি নিতে আসে। এই সময়েই তাদের গণনা করা হয়।
অন্যদিকে, পাহাড়ি এলাকায় অনেক লোক তাদের পশুর সাথে উপরের এলাকায় চলে যায়। সরকার এই লোকেদের সাথে যোগাযোগ করে জনগণনা সম্পর্কে জানায়। এই লোকেদের গণনার জন্য শিবির স্থাপন করা হয়। সেখানে এই লোকেরা পৌঁছায়, এবং জনগণনায় অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের গণনা করেন।
সরকার যখন পরবর্তী জনগণনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করবে, তখন জানা যাবে যে এইবার জনগণনা কীভাবে হবে এবং কার গণনা কীভাবে করা হবে।