ডিআরডিও-র কুশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের বিশেষত্ব কী? রাশিয়ার S-400-কে দেবে কড়া টক্কর

ডিআরডিও-র কুশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের বিশেষত্ব কী? রাশিয়ার S-400-কে দেবে কড়া টক্কর

যখন অপারেশন সিঁদুর শুরু হয়েছিল, তখন বিশ্বের কোনো দেশই ভাবেনি যে ভারতের কাছেও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের অধীনে তৈরি এমন অনেক মারক ক্ষমতা সম্পন্ন অস্ত্র থাকতে পারে, কারণ ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক গত কয়েক বছর ধরে বিদেশি অস্ত্রের চুক্তি করে আসছিল।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেশীয় অস্ত্র অর্থাৎ ‘আত্মনির্ভর ভারত’ থেকে তৈরি অস্ত্রের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে হয়তো কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে দেশীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পথে আসতে শুরু করেছে। এখন সীমান্ত নিরাপত্তাতেও এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। যখন অপারেশন সিঁদুরের অধীনে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী এবং তাদের আস্তানাগুলোতে হামলা চালানো হয়েছিল, তখন ভারত তিনটি বাহিনীর দ্রুত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উঠে আসা পুরো বিশ্ব দেখল।

S-400-কে কড়া টক্কর দেবে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ‘কুশ’

অপারেশন সিঁদুরে S-400-এর যথেষ্ট আলোচনা হয়েছিল, যা পাকিস্তানের বিমান হামলাকে নস্যাৎ করে দিয়েছিল। এবার S-400-কে কড়া টক্কর দিতে প্রস্তুত ভারতের দেশীয় প্রতিরক্ষা বর্ম ‘কুশ’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। হ্যাঁ, নামের মতোই কাজ করার জন্য শত্রুদের উপর হামলা করতে প্রস্তুত ‘কুশ’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। শত্রু দেশ পাকিস্তান এবং তার সহযোগী চীন যখন কুশ এয়ার ডিফেন্সের শক্তি দেখবে, তখন হয়তো নিজেদের সুরক্ষায় কোনো এয়ার ডিফেন্স তৈরি করতে পারবে না।

ডিআরডিও-র পক্ষ থেকে হয়েছে উন্নয়ন

প্রোজেক্ট কুশ ডিআরডিও-র পক্ষ থেকে তৈরি ভারতের একটি সম্পূর্ণ দেশীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, যাকে ERADS অর্থাৎ এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও বলা হয়। অপারেশন সিঁদুরে ভারতীয় সেনাবাহিনী লক্ষ্য করেছিল যে, ভবিষ্যতের যুদ্ধে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার হতে পারে, যেমনটা পাকিস্তানের দিক থেকে করা হয়েছিল। এটি মাথায় রেখেই প্রোজেক্ট কুশ আনা হচ্ছে, যা একটি দীর্ঘ পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, যা যেকোনো বিমান হুমকি মোকাবিলা করতে পারে।

দেশীয় বিকল্পই প্রথম পছন্দ

ভারতের কাছে রাশিয়ান এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম S-400-ও রয়েছে, কিন্তু যেভাবে যুদ্ধের নীতি ও কৌশল পরিবর্তিত হয়েছে, তা বিবেচনা করে সব সময় বিদেশি অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল থাকা যায় না। এর ফলস্বরূপই ডিআরডিও-র স্বপ্নের প্রকল্প ‘কুশ’, যা ২৫০ কিলোমিটার দূরত্বে যুদ্ধবিমান আকারের লক্ষ্যবস্তু এবং ৩৫০ কিলোমিটার দূরত্বে বড় বিমানগুলিকে ধ্বংস করতে সক্ষম।

কুশ সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • মাল্টি-টিয়ার ইন্টারসেপ্টর মিসাইল:
    • M1 ইন্টারসেপ্টর: ১৫০ কিমি পাল্লার হুমকি ধ্বংস করে।
    • M2 ইন্টারসেপ্টর: ২৫০ কিমি পাল্লার মধ্যে লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করে।
    • M3 ইন্টারসেপ্টর: ৩৫০-৪০০ কিমি পাল্লার হুমকিতে আঘাত হানে।
  • উন্নত রাডার সিস্টেম: এতে উচ্চ-প্রযুক্তি সম্পন্ন দীর্ঘ পাল্লার নজরদারি এবং ফায়ার কন্ট্রোল রাডার রয়েছে, যা একই সময়ে একাধিক লক্ষ্যবস্তু সনাক্ত ও ট্র্যাক করতে সক্ষম।
  • বিভিন্ন হুমকির মোকাবিলা: ক্রুজ মিসাইল, স্টেALTH ফাইটার জেট, ড্রোন এবং নির্ভুল-নির্দেশিত যুদ্ধাস্ত্রের (PGMs) মতো বিভিন্ন বিমান হুমকিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
  • উচ্চ কিল প্রোবাবিলিটি: এর একক শটে লক্ষ্য ধ্বংসের সম্ভাবনা ৮০% এর বেশি এবং স্যালভো মোডে (একাধিক মিসাইল একসঙ্গে) ৯০% এর বেশি।
  • আইএএফের IACCS এর সাথে ইন্টিগ্রেশন: কুশ সিস্টেম ভারতীয় বিমান বাহিনীর ইন্টিগ্রেটেড এয়ার কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম (IACCS) এর সাথে নির্বিঘ্নে যুক্ত হতে পারবে, যা সামরিক ও বেসামরিক রাডারগুলির সাথে রিয়েল-টাইম সমন্বয় সাধন করবে।
  • ব্যালাস্টিক মিসাইল ডিফেন্স (BMD) ক্ষমতা: এই মিসাইল সিস্টেমটির স্বল্প বা মধ্যম পাল্লার বিএমডি ক্ষমতাও থাকতে পারে।
  • নৌবাহিনীর জন্য বিশেষ ভ্যারিয়েন্ট: M2 মিসাইলের একটি নৌ সংস্করণ রয়েছে যা মাচ ৭ গতিতে ভ্রমণকারী অ্যান্টি-শিপ ব্যালাস্টিক মিসাইল (ASBMs) আটকাতে সক্ষম, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর সুরক্ষাকে শক্তিশালী করবে।

এই দেশীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *