২৫ বছর পর আবারও আসছে বিপদ! চিনের দুইধারী তলোয়ারে কেঁপে উঠবে বিশ্ব, ভারতের কোটি কোটি মানুষের উপরও পড়বে প্রভাব

‘চায়না শক’ কী? চিনের অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা আবারও বিশ্ব বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো এশিয়ার দেশগুলি এই আশঙ্কায় ভুগছে যে, চিনা পণ্যের ঢল তাদের স্থানীয় উৎপাদন শিল্পকে ধ্বংস করে দেবে। প্রায় ২৫ বছর আগেও সস্তা চিনা পণ্যের বন্যায় পুরো বিশ্ব কেঁপে উঠেছিল।
এটিকে ‘চায়না শক’ নাম দেওয়া হয়েছিল। এই দুইধারী তলোয়ার বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতিকে নিচে নামিয়েছিল বটে, কিন্তু একই সাথে অনেক দেশের উৎপাদন শিল্পকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এবার আবারও ‘চায়না শক’-এর হুমকি দেখা দিয়েছে। চিন আবারও উৎপাদন গতি বাড়িয়েছে, কিন্তু তার অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা দুর্বল। তাই চিনের কো ম্পা নিগুলি তাদের পণ্য সস্তায় বিদেশে বিক্রি করতে ব্যস্ত। চিনা কো ম্পা নিগুলি তাদের পণ্যে ৭০% পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।
অনেক দেশের স্থানীয় শিল্প প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা: সিঙ্গাপুরের অনলাইন গ্রোসারি রিটেইলার ভিনসেন্ট শু জানিয়েছেন যে, চিনের অনেক বড় খাদ্য উৎপাদক স্টক সরানোর জন্য ব্যাপক ছাড় দিচ্ছেন। তার কো ম্পা নি Webuy Global এখন প্রতি সপ্তাহে ৫-৬ কন্টেইনার চিনা পণ্য আনছে। তিনি চিনের ই-কমার্স জায়ান্ট Pinduoduo-এর সাথেও অংশীদারিত্ব করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, চিনের এই কৌশল অনেক দেশের স্থানীয় শিল্পে আঘাত হানবে। এমন পরিস্থিতিতে চিনা পণ্যের বন্যায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কর্নেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এশ্বর প্রসাদ বলেছেন যে, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই আশঙ্কা করছে যে তারা চিনা রপ্তানির বন্যায় ডুবে যাবে। এই কারণেই অনেক দেশ চিন থেকে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করেছে।
এটি কীভাবে একটি দুইধারী তলোয়ার? তবে, ‘চায়না শক’ কেবল খারাপ নয়। অনেক দেশের জন্য, বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতির জন্য এটি স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে। Nomura এবং Goldman Sachs-এর মতো বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, চিনের সস্তা পণ্য মুদ্রাস্ফীতি কমাতে পারে, যা সুদের হার কমানোর পথ পরিষ্কার করবে।
সম্প্রতি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ৫০ বেসিস পয়েন্ট হার কমিয়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষের জন্য হোম লোন, কার লোন সস্তা হবে। Nomura-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলিও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত হার কমাতে পারে। যেখানে অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায়ও ৫০ বিপিএস কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারত এবং ASEAN দেশগুলিতে বিশেষ প্রভাব: চিনের অভ্যন্তরীণ ভোগ ক্রমাগত কমছে। এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য চিন ASEAN এবং দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিতে রপ্তানি বাড়াচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরুর ৪ মাসে চিনের ASEAN দেশগুলিতে রপ্তানিতে ১১.৫% বৃদ্ধি এসেছে। যেখানে আমেরিকার রপ্তানিতে ২.৫% কমেছে। শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই ASEAN দেশগুলিতে রপ্তানিতে ২০.৮% বৃদ্ধি এসেছে। যেখানে আমেরিকায় পাঠানো পণ্যে ২১% কমেছে। ভারত, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলি ইতিমধ্যেই অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করে তাদের শিল্পকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে।
ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে: Nomura মনে করে যে, যদি ২৫ বছর পর আবারও ‘চায়না শক’ আসে তবে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খাবে থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডে মুদ্রাস্ফীতি শূন্যের নিচে অর্থাৎ ডিফ্লেশনে যেতে পারে। অন্যদিকে, ভারতেও এর প্রভাব দেখা যাবে। তবে, এখানে মুদ্রাস্ফীতি কমলে সাধারণ ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন, কিন্তু স্থানীয় উৎপাদন খাতে চাপ বাড়বে।