পৃথিবীর কক্ষপথ বদলে যাচ্ছে, বিজ্ঞানীরাও বিস্মিত! মানুষ কি নিজেই ডেকে আনছে মহাবিপর্যয়?

জলই জীবনের ভিত্তি, যার ছাড়া মানুষ, প্রাণী এবং গাছপালার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। কিন্তু এই জলই এখন পৃথিবীর জন্য এক নতুন বিপদ ডেকে আনছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন।
ক্রমাগত ভূগর্ভস্থ জল (Underground Water) উত্তোলনের কারণে আমাদের পৃথিবী তার নিজ অক্ষ থেকে প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার পূর্ব দিকে হেলে গেছে। এই পরিবর্তন শুধু পরিবেশ নয়, বরং আবহাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং পৃথিবীর ঘূর্ণন পদ্ধতিকেও প্রভাবিত করছে।
গভীর গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য
সম্প্রতি ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস’ (Geophysical Research Letters) নামক এক স্বনামধন্য বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মানবজাতি ভূগর্ভ থেকে প্রায় ২,১৫০ গিগা টন জল পাম্প করে বাইরে বের করে এনেছে। এই পরিমাণ এত বিশাল যে, এর ফলে সমুদ্রের জলস্তর ৬ মিলিমিটারের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেন হেলে যাচ্ছে পৃথিবী?
যখনই পৃথিবীর উপর কোনো বড় ভরের পরিবর্তন ঘটে, তখন তার প্রভাব পৃথিবীর ঘূর্ণন দিক এবং অক্ষের উপর পড়ে। ভূগর্ভস্থ জল যখন একটি স্থান থেকে তুলে নেওয়া হয়, তখন সেখানকার ভর কমে যায় এবং জলের টানার কারণে মহাকর্ষীয় ভারসাম্য পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ পৃথিবী প্রতি বছর প্রায় ৪.৩৬ সেন্টিমিটার হারে হেলে গেছে এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার পূর্ব দিকে ঝুঁকে গেছে।
ভারতের ভূমিকা এবং এর মারাত্মক প্রভাব
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, ভূগর্ভস্থ জলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার দুটি প্রধান অঞ্চলে হয়েছে:
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল
- উত্তর-পশ্চিম ভারত (বিশেষত পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং রাজস্থান)
ভারতের ক্ষেত্রে, কৃষিকাজের জন্য বিপুল পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করা হয়। টিউবওয়েল এবং সাবমারসিবল পাম্পের অতিরিক্ত ব্যবহার জল সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। শুধু তাই নয়, এটি এখন বৈশ্বিক ভূ-তাত্ত্বিক ভারসাম্যকেও বিঘ্নিত করছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর প্রভাব
পৃথিবীর এই অক্ষ পরিবর্তনের প্রভাব কেবল তার ঘূর্ণন অক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব এখন জলবায়ুর উপরও দৃশ্যমান। বিজ্ঞানীদের মতে, যখন পৃথিবীর অক্ষ হেলে যায়, তখন এর প্রভাব মেরু অঞ্চল, মৌসুমি চক্র এবং বৃষ্টির ধরনে পড়তে পারে।
- ঘন ঘন খরা
- অনিয়মিত বৃষ্টিপাত
- গ্রীষ্ম ও শীতের ভারসাম্যের অভাব—এগুলো সবই এর প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
ভারতের জন্য সম্ভাব্য বিপদ এবং সমাধানের উপায়
ভারত ইতিমধ্যেই তীব্র জল সংকটের মোকাবিলা করছে। ‘জল জীবন মিশন’, ‘নমামি গঙ্গে’ এবং ‘গ্রাম জল যোজনা’-র মতো সরকারি প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও, প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে অনেক এলাকা খরা ও জলকষ্টে ভোগে। যদি ভূগর্ভস্থ জল এইভাবে উত্তোলন করা হতে থাকে, তবে:
- ভবিষ্যতে পানীয় জল পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
- কৃষি সেচ ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
- আবহাওয়া এবং কৃষি চক্র ব্যাহত হবে।
- এবং পৃথিবীর এই ঝুঁকে যাওয়ার কারণে অপ্রত্যাশিত ভৌগোলिक পরিবর্তনও ঘটতে পারে।
সমাধানের জরুরি প্রয়োজন:
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন:
- ওয়াটার রিচার্জিং সিস্টেমকে উৎসাহিত করা।
- বৃষ্টির জল সংরক্ষণকে বাধ্যতামূলক করা।
- কৃষকদের সূक्ष्म সেচ প্রযুক্তি (ড্রিপ, স্প্রিঙ্কার) গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা।
- অন্ধা ধন্দ বোরিং এবং টিউবওয়েলের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা।
- জল সংরক্ষণ বিষয়ে জনসচেতনতা অভিযান চালানো।