চীনের চাল ও আমেরিকার ‘নাক ঘষানো’… ১ লাখ পার করার পরও থামবে না সোনার দাম, কী এই কৌশল?

চীনের চাল ও আমেরিকার ‘নাক ঘষানো’… ১ লাখ পার করার পরও থামবে না সোনার দাম, কী এই কৌশল?

বিশ্বে উত্তেজনা বাড়ার সাথে সাথে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ রিটার্নের দিকে মনোযোগ দেন। ট্রাম্পের আমেরিকান রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর বাণিজ্য যুদ্ধের পরিবেশের মধ্যে সোনা যে দ্রুত গতিতে উপরে উঠেছে, তা প্রত্যাশিত ছিল না। এর ফলস্বরূপ, সোনা এবং রূপা উভয় ধাতু তাদের রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝে বিশ্বের মুদ্রাব্যবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে। এর মধ্যে সোনা দিন দিন আবার শক্তিশালী হচ্ছে। রূপার দামও রেকর্ড স্তরে পৌঁছানোর পর দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে কিছু বিশেষজ্ঞের পক্ষ থেকে এই দাবিও করা হচ্ছে যে, আগামী দুই মাসে সোনা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নিচে নামতে পারে। সহজ ভাষায় বললে, তাদের পক্ষ থেকে সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে ৮৫,০০০ টাকা পর্যন্ত নেমে আসার সম্ভাবনা প্রকাশ করা হয়েছে।

চীন সোনার মজুদ বাড়াতে কেন জোর দিচ্ছে? ডলারের প্রভাব কমানোর কৌশল!

বেশি বেশি সোনা রাখার জন্য উৎসাহ: উইকেন্ড ইনভেস্টিং-এর প্রতিষ্ঠাতা অলোক জৈন সোনা ও রূপার দামে আসা পরিবর্তন নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেছেন। তিনি তার X হ্যান্ডেলে লিখেছেন, চীন তাদের দেশবাসীকে বেশি বেশি সোনা রাখার জন্য উৎসাহিত করছে। অলোক জৈন এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন যে, চীন সোনার চাহিদা বাড়াতে, সোনার বাণিজ্য প্রসারিত করতে এবং চীন ও মধ্যপ্রাচ্যে সাংহাই গোল্ড এক্সচেঞ্জ (Shanghai Gold Exchange) চালু করার পরিকল্পনা করছে। তিনি লিখেছেন, ‘তারা (চীনের মানুষ) জানে যে আগামী সময় সোনার।’

ডলারের ক্ষমতা কমানোর পরিকল্পনা: চীন এই পদক্ষেপ তখন নিচ্ছে যখন ভারতে গোল্ড লোনে নিষেধাজ্ঞা এবং আমদানিতে বেশি ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে। গত দিনে জেনেভা ট্রেড এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে উত্তেজনা কমেছে। কিন্তু চীনের পক্ষ থেকে একটি বড় কৌশলের উপর কাজ করা হচ্ছে। তারা তাদের আর্থিক ব্যবস্থায় সোনা এবং ইউয়ানের (চীনের মুদ্রা) উপর মনোযোগ দিয়ে ডলারের ক্ষমতা কমাতে চায়। মার্চ ২০২৫-এ চীন ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিশন (CBIRC)-এর পক্ষ থেকে নতুন নিয়ম জারি করেছে। এর অধীনে ইন্স্যুরেন্স কো ম্পা নিগুলোকে ৩২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি) সম্পত্তির অন্তত ১% ফিজিক্যাল গোল্ডে বিনিয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে চীন থেকে আবারও গোল্ড মার্কেটে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ যেতে পারে।

SHFE ইন্স্যুরেন্স কো ম্পা নিগুলোর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে: এর জন্য সাংহাই ফিউচার্স এক্সচেঞ্জ (SHFE) ইন্স্যুরেন্স কো ম্পা নিগুলোর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তারা সরাসরি সোনা কিনতে পারবে। SHFE-এর পক্ষ থেকে এইও বলা হয়েছে যে, এই প্রথম ইন্স্যুরেন্স কো ম্পা নিগুলোকে এমন সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের শুরুতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের দেশবাসীকে সোনা কেনার জন্য ক্রমাগত উৎসাহিত করেছে। এর ফলে সোনার ব্যবহার এক বছরে ৩৪% পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এই দিনগুলোতে সোনার উপর বেশি বেশি বিনিয়োগে মনোযোগ দিচ্ছে।

চীন ও ভারতে সোনা: চীনের পক্ষ থেকে গত ২৫ বছর (২০০০ সাল থেকে) তাদের গোল্ড রিজার্ভ বাড়ানো হচ্ছে। এটি ৩৯৫ টন থেকে বেড়ে ২,২০০ টনের বেশি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি আগামী সময়ে ৫,০০০ টনের বেশি হতে পারে। অন্যদিকে, ভারতে পারিবারিক মহিলাদের কাছে ২৫,০০০ টনের বেশি সোনা রয়েছে, যা গহনার আকারে ঐতিহ্য এবং সুরক্ষার জন্য রাখা হয়। তবুও ভারত সরকার সোনা সম্পর্কিত নীতির উপর কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *