বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (WTO) ভারত-আমেরিকা সংঘাত: কীভাবে পরিস্থিতি বিগড়ে গেল?

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (WTO) ভারত-আমেরিকা সংঘাত: কীভাবে পরিস্থিতি বিগড়ে গেল?

ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের মধ্যে বর্তমানে সব কিছু স্বাভাবিক নেই। যদিও মাঝে মাঝে কূটনৈতিক হাসি ছবিতে দেখা যায়, কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। একদিকে আমেরিকা চীনের সঙ্গে বিরল খনিজ পদার্থ নিয়ে চুক্তি করছে। ম্যাগনেট এবং খনিজ সরবরাহ নিয়ে চুক্তি হচ্ছে। অন্যদিকে, ভারত থেকে আসা গাড়ি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর বিশাল শুল্ক আরোপ করে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ভারত এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের পরিপন্থী বলে মনে করে সরাসরি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (WTO) অভিযোগ দায়ের করেছে।

ভারতের বক্তব্য হলো, এই শুল্কগুলো সেফগার্ড মেজার্স (সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ)। যেখানে আমেরিকা সরাসরি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে, তারা কোনো সেফগার্ড আরোপ করেনি এবং তাই আলোচনার কোনো ভিত্তিই নেই।

গত সপ্তাহে, ওয়াশিংটন ভারত থেকে বা ভারতে আমদানি করা যাত্রীবাহী গাড়ি এবং হালকা ট্রাক ও কিছু গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫% যथामূল্য শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর ভারত আমেরিকা থেকে পরামর্শ চেয়েছিল। গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর এই পদক্ষেপ ২৫ সালের ৩ মে থেকে কার্যকর হবে এবং এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বলবৎ থাকবে। ওয়াশিংটন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে জানিয়েছে যে, গাড়ির ওপর শুল্ক ধারা ২৩২-এর অধীনে আরোপ করা হয়েছে, যা একটি জাতীয় নিরাপত্তা আইন, এবং আমেরিকা বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়মের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যতিক্রমের অধীনে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমেরিকা জোর দিয়ে বলেছে যে, তারা ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ধারা ২০১ অনুযায়ী কাজ করেনি, যার অধীনে তারা সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ প্রয়োগ করে। আমেরিকা আরও বলেছে যে, এই কাজগুলো সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নয় এবং তাই এই পদক্ষেপগুলির বিষয়ে সুরক্ষা চুক্তির অধীনে পরামর্শ করার কোনো ভিত্তি নেই।

ভারত বলেছে যে, আমেরিকা সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সুরক্ষামূলক পদক্ষেপের চুক্তি (AOS)-এর বিধানের অধীনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সুরক্ষা কমিটি-কে অবহিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমেরিকা গত বছর বিশ্বব্যাপী ৮৯ বিলিয়ন ডলারের গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করেছিল, যার মধ্যে মেক্সিকোর অংশ ছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলার, চীনের ১০.১ বিলিয়ন ডলার এবং ভারতের মাত্র ২.২ বিলিয়ন ডলার। ওয়াশিংটন সুরক্ষামূলক পদক্ষেপের নামে ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আমেরিকান শুল্ক মোকাবেলায় আপেল, বাদাম, নাশপাতি, অ্যান্টি-ফ্রিজিং প্রস্তুতি, বোরিক অ্যাসিড এবং লোহা ও ইস্পাত থেকে তৈরি কিছু পণ্য সহ ২৯টি আমেরিকান পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের নয়া দিল্লির প্রস্তাবেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। নয়া দিল্লি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে জানিয়েছে যে, এই পদক্ষেপগুলো আমেরিকায় ৭.৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানিকে প্রভাবিত করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *