ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারি, পরীক্ষা চলাকালীন আগুন… শুরু থেকেই বিতর্কে বোয়িং-এর ড্রিমলাইনার!

ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারি, পরীক্ষা চলাকালীন আগুন… শুরু থেকেই বিতর্কে বোয়িং-এর ড্রিমলাইনার!

আমেরিকান বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা বোয়িং-এর A-787 ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানগুলির সাথে বিতর্কের পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে। গত পাঁচ বছরে মার্কিন সরকার অন্তত দু’বার এই মডেলের বিমানগুলির নিরাপত্তা খতিয়ে দেখেছে। কখনও এর ইঞ্জিন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তো কখনও এই কো ম্পা নিতে কর্মরত একজন ইঞ্জিনিয়ার বোয়িং বিমানের নির্মাণ নিয়ে কিছু গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। গত বছরই আমেরিকা এই মডেলের বিমানে পাইলটের সিটের পজিশনিং নিয়ে তদন্ত করিয়েছিল।

বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, ২০১১ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আসার পর থেকে A-787 ড্রিমলাইনার বিমানগুলি এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনার শিকার হয়নি এবং সমস্ত বিতর্কের সবচেয়ে শক্তিশালী জবাব বোয়িং-এর পক্ষ থেকে এটাই ছিল। এয়ার ইন্ডিয়ার আহমেদাবাদ-লন্ডন গ্যাটউইক রুটের ফ্লাইট নম্বর A-171 বিধ্বস্ত হওয়ার পর বোয়িং আর এই যুক্তি দিতে পারবে না। এমনিতেই প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাস-এর থেকে পিছিয়ে পড়া বোয়িং-এর সামনে সমস্যা বাড়বে। দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এর শেয়ার আট শতাংশ কমে গেছে। বোয়িং ড্রিমলাইনার মডেল বিমানটি ২০০৭ সালে প্রথম লঞ্চ করার ঘোষণা করেছিল। যদিও প্রথম বাণিজ্যিক উড়ান ২০১১ সালেই শুরু হতে পেরেছিল এবং বহু বিশেষজ্ঞ এটিকে একটি সামগ্রিক বিমান হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।

বহু সুবিধা সমৃদ্ধ এই ড্রিমলাইনার

সাধারণ বিমানের চেয়ে শক্তিশালী হওয়ার দাবি করা হয়েছিল, এছাড়াও কো ম্পা নি এতে বিশেষ ধরনের ইস্পাত ব্যবহার করে এটিকে হালকা করে তুলেছিল। এতে জ্বালানি কম খরচ হত। বোয়িং এর ভিতরে আর্দ্রতা ও অক্সিজেন নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন প্রযুক্তি স্থাপন করেছিল, যার কারণে এটিকে দীর্ঘ দূরত্বের জন্য আরও উপযুক্ত বলে মনে করা হয়েছিল। ড্রিমলাইনার ছিল প্রথম যাত্রীবাহী বিমান যেখানে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এয়ার-কন্ডিশনিং এবং অন্যান্য ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম লাগানো ছিল। এই কারণগুলির জন্য, লঞ্চের কিছু সময় পরেই বিমানটি কেনার জন্য এয়ারলাইনগুলির লাইন লেগে যায়। প্রথম দশকে ১০০৬টি ড্রিমলাইনার বিমান বিক্রি হয়েছিল এবং এখনও বোয়িং-এর কাছে প্রায় ২১৫০টি বিমানের অর্ডার রয়েছে।

গত মাসে মে, ২০২৫-এ কাতার এয়ারওয়েজ একসঙ্গে ১৩০টি A-787 ড্রিমলাইনার বিক্রির অর্ডার দিয়েছে। এত কিছুর পরেও শুরু থেকেই কোনো না কোনো বিতর্ক এই মডেলের সাথে লেগেছিল। ২০১০ সালের নভেম্বরে ড্রিমলাইনারের পরীক্ষামূলক উড়ান স্থগিত করতে হয়েছিল কারণ বিমানের ভিতরে আগুনের ঘটনা দেখা গিয়েছিল। এটিকে জরুরি অবস্থায় অবতরণ করাতে হয়েছিল। এর কারণে, পরিকল্পনা থেকে তিন বছর দেরিতে এর বাণিজ্যিক উড়ান শুরু হতে পেরেছিল।

কর্মীদের দেওয়া বহু অভিযোগ

উড়ান শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরেই ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দুটি ড্রিমলাইনারে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়রন ব্যাটারিতে কিছু ত্রুটি দেখা যায়। জাপানে এই কারণে একটি উড়ানকে জরুরি অবস্থায় অবতরণ করাতে হয়েছিল। এর পর বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ড্রিমলাইনার বিমানের কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। ২০২৪ সালে বিমান শিল্পে তোলপাড় সৃষ্টি হয় যখন বোয়িং-এ কর্মরত কিছু কর্মচারী অভিযোগ করেন যে, 777 এবং 787 মডেলের নির্মাণে পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে না এবং এর ফলে ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্যাম সালেহপুর, জন বার্নেট, রিচার্ড কোভাস বিভিন্ন সময়ে বোয়িং-এর বিরুদ্ধে ড্রিমলাইনারকে নিয়ে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। বেশিরভাগ অভিযোগই ড্রিমলাইনারের নির্মাণের পদ্ধতি নিয়ে ছিল।

নির্মাণ ব্যবস্থায় বহু ত্রুটি

স্যাম সালেহপুর নামের বোয়িং-এর একজন প্রাক্তন কর্মচারী ড্রিমলাইনার বিমানের বিভিন্ন অংশকে একে অপরের সাথে যুক্ত করার প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং বলেছিলেন যে কিছু সংখ্যক উড়ানের পরেই এতে ত্রুটি দেখা দিতে পারে? আমেরিকান এজেন্সি ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) এর তদন্ত করে। এতে নির্মাণ ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটিও খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও বোয়িং সবসময়ই বলে আসছে যে, ড্রিমলাইনার বা অন্যান্য বিমানের নির্মাণে তাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়ার পর বোয়িং-এর সামনে ড্রিমলাইনার বিমান নিয়ে নতুন অনেক প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট নম্বর A-171 এর দুর্ঘটনা ড্রিমলাইনার বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে পূর্বে যে উদ্বেগগুলি ছিল, সেগুলিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *