ইরান একদিকে গভীর খাদ, অন্যদিকে কূয়ো! ইজরায়েলে হামলা করে কীভাবে মাঝপথে ফেঁসে গেল?

মধ্যপ্রাচ্যের (Middle East) ভূমি এখন উত্তপ্ত এবং ইরান (Iran) এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে প্রতিটি পথই ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। একদিকে ইজরায়েল (Israel), যারা শুক্রবার (১৩ জুন ২০২৫) ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে (nuclear facilities) প্রচণ্ড হামলা চালিয়ে যুদ্ধের সূচনা করেছে।
৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ৩৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। জবাবে ইরানও ১৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ballistic missiles) নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে ৬টি সরাসরি তেল আবিবের (Tel Aviv) কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, এরপর কী? ইরান কি যুদ্ধের আগুন আরও বাড়াবে?
এ কথাও মনে রাখা উচিত যে, এই রবিবার অর্থাৎ ১৫ জুন ওমানে (Oman) আমেরিকা (America) এবং ইরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি (nuclear deal) নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তবে আপাতত সেটিও অনিশ্চিত। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ইরানকে বলেছেন যে, তারা এখনও আলোচনার টেবিলে (negotiating table) ফিরে আসতে পারে। কিন্তু ইরান কি আমেরিকার সাথে সমঝোতা করবে? নাকি পরিস্থিতি এতটাই খারাপ করে দেবে যে আমেরিকাকে সরাসরি মাঠে নামতে হবে? প্রতিটি বিকল্পেই হয় ধ্বংস অথবা অপমান। আসুন, সেই পাঁচটি প্রধান কারণ বুঝি, যার কারণে ইরান আজ একটি ঐতিহাসিক সংকটের সবচেয়ে বিপজ্জনক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
১. যুদ্ধ চালিয়ে গেলে ব্যাপক ক্ষতি নিশ্চিত
যদি ইরান পাল্টা হামলা বাড়ায় এবং আলোচনা থেকে সরে আসে, তাহলে ইজরায়েলের পক্ষ থেকে আরও ভয়াবহ হামলার আশঙ্কা রয়েছে। এতে শুধু পুরো অঞ্চলই অস্থিতিশীল হবে না, বরং ইরানের সামরিক শক্তি (military power) এবং অর্থনীতিও (economy) ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
২. সমঝোতা করলে লজ্জা এবং রাজনৈতিক ক্ষতি
ওমানে রবিবার (১৫ জুন ২০২৫) আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ইজরায়েলি হামলার পর ইরান এখন দ্বিধায়। যদি তারা আমেরিকার চাপে সমঝোতা করে এবং তাদের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলি বন্ধ করতে রাজি হয়, তাহলে এটি ইরানের আয়াতুল্লাহ খামেনি (Ayatollah Khamenei)-এর আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি উভয়ের জন্যই একটি ধাক্কা হবে। এতে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানে অসন্তোষ এবং জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে পারে।
৩. আমেরিকাকে মাঠে টানলে ঝুঁকি আরও বড়
ইরানের সামনে তৃতীয় একটি বিকল্পও রয়েছে: যুদ্ধকে এতটাই বাড়িয়ে দেওয়া যে আমেরিকাকেও সরাসরি মাঠে নামতে হয়। এতে আমেরিকার উপর চাপ পড়বে, কিন্তু এর ফল পুরো বিশ্বের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। এই বিকল্পটি স্বয়ং ইরানের জন্যও ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হতে পারে।
৪. নেতানিয়াহুর দাবি: পারমাণবিক কর্মসূচির মাথায় আঘাত করা হয়েছে
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) তার হামলা নিয়ে একটি বড় বিবৃতি দিয়েছেন যে, “আমরা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির (nuclear weapon program) মাথায় আঘাত করেছি।” এটি একটি সরাসরি বার্তা যে, ইজরায়েল যেকোনো মূল্যে ইরানকে পারমাণবিক শক্তি হতে দেবে না। এটি কূটনৈতিক সতর্কতার চেয়েও বেশি একটি যুদ্ধ ঘোষণার মতো।
৫. চারদিকে শত্রু: বাইরেও, ভিতরেও
ইরান আজ কেবল ইজরায়েলের সঙ্গেই লড়াই করছে না, বরং দেশের ভিতরেও তাকে জনগণ এবং কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর (hardline factions) ক্ষোভের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। উপরন্তু, আমেরিকার চাপ এবং নতুন নিষেধাজ্ঞার (sanctions) হুমকিও মাথায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের কাছে কোনো সহজ বিকল্প নেই। যুদ্ধ করলে ধ্বংস নিশ্চিত এবং মাথা নত করলে ভাবমূর্তির ক্ষতি।