পাইলটের শেষ মুহূর্তের বার্তা ‘থ্রাস্ট নট অ্যাচিভড’ এবং ‘মে ডে’ কলের রহস্য উন্মোচন

পাইলটের শেষ মুহূর্তের বার্তা ‘থ্রাস্ট নট অ্যাচিভড’ এবং ‘মে ডে’ কলের রহস্য উন্মোচন

‘থ্রাস্ট (Thrust) পাচ্ছি না… মে ডে! মে ডে!’ পাইলটের এই শেষ কথাগুলোর সাথে সাথেই আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে উড়ে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে আছড়ে পড়ে এবং আগুনের গোলাতে পরিণত হয়। গত ১২ জুনের এই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪১ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে, যদিও একজন ব্যক্তি জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। বিমানের ব্ল্যাক বক্স ইতিমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে এবং এই দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে। এর মধ্যেই পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (ATC)-এর মধ্যে হওয়া কথোপকথন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

পাইলট শেষ মুহূর্তে ‘মে ডে! মে ডে!’ কল দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে ‘থ্রাস্ট অ্যাচিভ হচ্ছে না… বিমান নিচে নামছে… মে ডে! মে ডে!’ এর অর্থ হলো, তিনি বিমানটিকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। হয়তো তিনি বেশি থ্রাস্ট দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন যে বিমানটি আবাসিক এলাকা থেকে কিছুটা এগিয়ে যাক, যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। এর পরেই পাইলটের সাথে এটিসির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বিমানটি মেডিকেল কলেজের ভবনে ধাক্কা লেগে আগুনের শিখায় ঢেকে যায়। ‘মে ডে’ কল নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে যে, এটি অত্যন্ত গুরুতর জরুরি পরিস্থিতিতে, যখন পাইলটের কাছে কোনো বিকল্প থাকে না, তখন তিনি ‘মে ডে’ কল দেন। পাইলট আরও বলেছিলেন ‘থ্রাস্ট নট অ্যাচিভড…’।

থ্রাস্ট কী? থ্রাস্ট বিমানকে উড়তে সাহায্যকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি, যা বিমানকে সামনের দিকে ঠেলে দেয় এবং এটি বাতাসে উড়তে গিয়ে তার দিক বজায় রাখতে পারে। সহজ কথায়, থ্রাস্টই বিমানকে গতি ও উড্ডয়ন ক্ষমতা প্রদান করে। থ্রাস্ট একটি প্রোপালসিভ শক্তি যা বিমানের ইঞ্জিন (যেমন জেট ইঞ্জিন বা প্রপেলার) দ্বারা উৎপন্ন হয়। এই শক্তিই বাতাসের প্রতিরোধকে দূর করে বিমানকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

‘থ্রাস্ট অ্যাচিভড’ মানে কী? ‘থ্রাস্ট অ্যাচিভড’ মানে হলো, বিমানের ইঞ্জিনগুলি উড্ডয়ন বা প্রয়োজনীয় গতি অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত থ্রাস্ট উৎপন্ন করেছে। এই শব্দটি বিশেষত টেক-অফের (উড্ডয়ন) সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়। বিমানকে টেক-অফ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট গতি (টেক-অফ স্পিড) অর্জন করতে হয়, যাতে এটি উপরে উঠতে পারে। এই গতি অর্জনের জন্য ইঞ্জিনগুলিকে পর্যাপ্ত থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে হয়।

‘থ্রাস্ট নট অ্যাচিভড’ মানে কী? এটি একটি গুরুতর পরিস্থিতি যখন ইঞ্জিনগুলি টেক-অফের জন্য প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট তৈরি করতে পারে না। এর অর্থ হলো, বিমান পর্যাপ্ত গতি অর্জন করতে পারবে না এবং নিরাপদে উড়তে পারবে না। এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং বিমান দুর্ঘটনায় ঠিক এই পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছিল। উড্ডয়নের পরপরই পাইলট দেখতে পান যে থ্রাস্ট পাওয়া যাচ্ছে না। বিমান উপরে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত গতি অর্জন করতে পারছে না। পাইলট তাই এটিসিকে বলেছিলেন, “মে ডে, মে ডে, মে ডে… থ্রাস্ট নট অ্যাচিভড। পাওয়ার কমে যাচ্ছে, প্লেন উঠছে না।” অবশেষে বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *