যে বিরল খনিজ সম্পদে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য, এবার তাকে কড়া টক্কর দেবে ভারতের এই সংস্থা

বিরল মৃত্তিকা উপাদান, অর্থাৎ রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস, আজকের বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণগুলির মধ্যে অন্যতম। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার চিপস, ইলেকট্রিক গাড়ি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, স্যাটেলাইট, বায়ু টারবাইন এবং উচ্চ প্রযুক্তির শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে এদের ব্যবহার অপরিহার্য। এই খনিজগুলি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, আগামী সময়ে এগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ কোনো দেশের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষমতা নির্ধারণ করতে পারে। বর্তমানে এই সম্পদের উপর চীনের একচ্ছত্র রাজত্ব। চীন বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি বিরল মৃত্তিকা খনিজ শুধুমাত্র নিষ্কাশনই করে না, বরং সেগুলি প্রক্রিয়াজাত করে সমগ্র বিশ্বে সরবরাহ করে। আমেরিকা এবং ইউরোপও চীনের এই সাপ্লাই চেইনের উপর নির্ভরশীল।
চীনের উৎপাদিত বিরল মৃত্তিকা উপাদানগুলির মধ্যে নিওডাইমিয়াম, প্র্যাসিওডাইমিয়াম, ল্যান্থানাম, সেরিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম এবং টেরবিয়াম উল্লেখযোগ্য। এগুলি বিশেষ ধরনের চুম্বক, বৈদ্যুতিক মোটর, রাডার, মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেম এবং নবায়নযোগ্য শক্তি সরঞ্জামগুলিতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এবার ভারতও এই কৌশলগত প্রতিযোগিতায় নামছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছে সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা জিএমডিসি (গুজরাট মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন)। জিএমডিসি গত কয়েক দশক ধরে ভারতে লিগনাইট, বক্সাইট, ফ্লোরাইট-এর মতো খনিজ উৎপাদন করে আসছে। কিন্তু এখন এই সংস্থা বিরল মৃত্তিকা খনিজ সেক্টরে প্রবেশ করেছে। জিএমডিসি-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তারা এখন নির্বাচিত কিছু লাইট রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস (LREEs) যেমন ল্যান্থানাম (La), সেরিয়াম (Ce), নিওডাইমিয়াম (Nd), প্র্যাসিওডাইমিয়াম (Pr) এর অনুসন্ধান ও উৎপাদনে কাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই উপাদানগুলি চীনের শীর্ষস্থানীয় তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, জিএমডিসি সেই সম্পদগুলির জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছে যার জন্য বিশ্ব চীনের মুখাপেক্ষী। এটি ভারতের জন্য একটি বড় গেম চেঞ্জার প্রমাণিত হতে পারে, বিশেষত যখন পুরো বিশ্ব চীনের একাধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এই সরকারি মালিকানাধীন সংস্থাটি শেয়ার বাজারেও তালিকাভুক্ত।
জিএমডিসি একটি তালিকাভুক্ত সংস্থা, যা এনএসই এবং বিএসই উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই লেনদেন হয়। গত কিছুদিনে এর শেয়ারে ভালো বৃদ্ধি দেখা গেছে। শুক্রবার, ১৩ জুন, বিএসই-তে কো ম্পা নির শেয়ার ০.৯৬ শতাংশ সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৪০৮.৪৫ টাকায় বন্ধ হয়েছে। এই সময়ে সংস্থাটি তার বিনিয়োগকারীদের প্রতি শেয়ারে ৩.৯০ টাকা রিটার্ন দিয়েছে। গত ১ মাসে এই কো ম্পা নির শেয়ারের দাম ২৭.৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা প্রতি শেয়ারে ৮৭.৮৫ টাকা লাভ করেছেন। যদিও গত ১ বছরে কো ম্পা নির শেয়ারের দামে ৫.৫৪ শতাংশের সামান্য বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু গত ৫ বছরের রিটার্ন গ্রাফ দেখলে শেয়ারের দাম ৯৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এই সময়ে বিনিয়োগকারীরা প্রতি শেয়ারে ৩৬৯ টাকা লাভ করেছেন। সংস্থাটি তার ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ (৪৩৯.৯০ টাকা) স্তর থেকে সামান্য নিচেই লেনদেন করছে। কো ম্পা নির বাজার মূলধন ১২,৯৮৯ কোটি টাকা রেকর্ড করা হয়েছে। যেখানে এক দিকে কো ম্পা নির ঐতিহ্যবাহী আয় লিগনাইটের মতো জ্বালানি খনিজ থেকে আসত, সেখানে এখন বিরল মৃত্তিকার সংযোজন এর পোর্টফোলিওকে আরও ভবিষ্যৎ-কেন্দ্রিক করে তুলেছে। প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি পরিবর্তনের মতো শিল্পগুলিতে এই খনিজগুলির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে জিএমডিসি দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।