ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা কেন মরছে? নেতানিয়াহুর ভুল নাকি চাল?

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা কেন মরছে? নেতানিয়াহুর ভুল নাকি চাল?

ইসরায়েলের হাইফার কাছে অবস্থিত তামরা শহরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কেবল একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং একটি বেদনাদায়ক প্রশ্ন হয়ে উঠেছে যে, যখন লক্ষ্য ছিল ইসরায়েল, তখন ফিলিস্তিনি নাগরিকরা কেন মারা গেল?

এটি কি সুরক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা নাকি একটি কৌশলগত উপেক্ষা? এই শহরে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষ ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিক, যাদের জন্য বোমা আশ্রয় কেন্দ্র নেই এবং সমান সুরক্ষা ব্যবস্থাও নেই। প্রশ্ন ওঠে যে, এই জীবনগুলোকে কি কেবল ‘সহযোগী ক্ষতি’ (collateral damage) হিসেবে ধরা হচ্ছে?

শনিবার রাত প্রায় ১১:৫০ মিনিটে ইরান থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র তামরা শহরের খাতিব পরিবারের বাড়িতে আঘাত হানে। স্থানীয় জরুরি পরিষেবা এমডিএ (MDA) অনুসারে, এই হামলায় শিক্ষিকা মানার খাতিব, তার দুই মেয়ে ১৩ বছর বয়সী শাথা এবং ২০ বছর বয়সী হালা, এবং একজন আত্মীয় মানার দিয়াব ঘটনাস্থলেই মারা যান। মানারের স্বামী রাজা এবং সবচেয়ে ছোট মেয়ে রাজান কোনোমতে বেঁচে যান।

ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার প্রশ্ন
তামরা একটি শান্ত শহর ছিল, যা কদাচিৎ লেবানন সীমান্ত থেকে আসা রকেটের আওতায় আসত। কিন্তু সরাসরি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা একটি নতুন এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো যে, ফিলিস্তিনি নাগরিকদের শহরগুলিতে এখনও পর্যাপ্ত বোমা আশ্রয় কেন্দ্র নেই, যদিও এই এলাকা এখন যুদ্ধের আওতায় চলে এসেছে। এই আসামতা গত কয়েক বছর ধরে উত্থাপিত হচ্ছে, কিন্তু কোনো সমাধান মেলেনি।

ধ্বংসাবশেষ, মৃত্যু এবং শোক…
হামলার পরের দিন যখন মানুষ বাড়ি থেকে বের হয় তখন চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্য ছিল। রাস্তা ধ্বংসাবশেষে ভরা ছিল, গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল এবং আশেপাশের অনেক বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে গিয়েছিল। তিন তলা খাতিব পরিবারের ভবনটি সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়েছিল। এই বেদনাদায়ক দৃশ্য পুরো শহরকে নাড়া দিয়েছিল এবং প্রতিটি মুখে ভয় ও রাগ স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল।

নেতানিয়াহুর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন
তামরার ঘটনা এখন শুধু একটি হামলা নয়, বরং ইসরায়েলি সরকারের অগ্রাধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার কি ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনি এলাকার নিরাপত্তা উপেক্ষা করছে? নাকি এটি একটি চাল, যেখানে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে অদৃশ্য শত্রুর মতো বাঁচতে বাধ্য করা হচ্ছে? যখন যুদ্ধে সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণী সবচেয়ে বেশি মারা যায়, তখন এটি কেবল যুদ্ধ নয়, রাজনৈতিক ব্যর্থতা।

যদি নেতানিয়াহু সরকার এখনও নিরাপত্তায় সমতা না আনে, তাহলে এই যুদ্ধ কেবল সীমান্ত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ইসরায়েলের ভেতরেও অসন্তোষের কারণ হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *