ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব, বিমান ভাড়া থেকে চাল-চা পর্যন্ত ভারত সব দিক থেকে ধাক্কা খাচ্ছে

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব, বিমান ভাড়া থেকে চাল-চা পর্যন্ত ভারত সব দিক থেকে ধাক্কা খাচ্ছে

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সরাসরি প্রভাব ভারত থেকে ইউরোপ, আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলির বিমান যাত্রায় পড়ছে। পাকিস্তানের পর এখন ইরান, ইরাক, ইসরায়েল, জর্ডান এবং সিরিয়াও তাদের বিমানপথ বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে বিমানের রুট বদলে গেছে।

এই কারণে যাত্রীদের প্রচুর অসুবিধা হচ্ছে এবং বিমান ভাড়া এই সপ্তাহে ২০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিমান ভাড়ায় সরাসরি প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উড়ানের পথ দীর্ঘ হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব বিমানের উড়ান সময় এবং ভাড়ার উপর পড়ছে। কিছু অঞ্চলে ইতিমধ্যেই ১২ থেকে ১৫% বৃদ্ধি দেখা গেছে। ট্র্যাভেল অনলাইন-এর কো-ফাউন্ডার সাবিনা চোপড়ার মতে, বিমানপথের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কারণে বিমানগুলিকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লাগছে। এই অতিরিক্ত সময় এবং দীর্ঘ রুটের কারণে বিমান সংস্থাগুলির পরিচালন ব্যয় বেড়েছে, যার ফলে কিছু রুটের ভাড়ায় ১৫ থেকে ২০% পর্যন্ত বৃদ্ধি ঘটেছে। উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে আসা-যাওয়া করা উড়ান রুটগুলিতেও বিমানপথের উপর চলমান নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রচুর ভিড় দেখা যাচ্ছে।

মালবাহী জাহাজ এবং রপ্তানির উপর গুরুতর প্রভাব
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব শুধু বিমান যাত্রা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। সমুদ্রপথে মালবাহী জাহাজের ভাড়াও ৫০% পর্যন্ত বেড়েছে। এর সাথে বীমা শুল্ক বাড়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। রপ্তানিকারকদের মতে, এই যুদ্ধের কারণে ইউরোপ এবং রাশিয়া-এর মতো দেশগুলিতে ভারতের রপ্তানি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।

সরকার এই পুরো প্রভাবের মূল্যায়ন করছে এবং রপ্তানিকারকদের এর প্রভাব থেকে বাঁচাতে আলোচনারও চেষ্টা করছে। সরকারের প্রধান মনোযোগ সেই দেশগুলিতে, যেমন ইউএই, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান এবং ইসরায়েলে, রপ্তানি সুরক্ষিত করার উপর রয়েছে।

দুবার ক্যান্সার, দুটি কিডনিই ফেল, তবুও ৫০০ ছবির রানি ছিলেন এই অভিনেত্রী
বাণিজ্য পথ এবং বাসমতী চালের রপ্তানি
যদি এই যুদ্ধ দীর্ঘকাল ধরে চলে, তাহলে ইরান ও ইউএই-এর মধ্যে অবস্থিত হরমুজ জলপথ এবং লোহিত সাগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথগুলির মাধ্যমে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস (FIEO) বলছে যে ইউক্রেন সংকটের পর মালবাহী জাহাজগুলি ধীরে ধীরে লোহিত সাগরের রুটগুলিতে ফিরে এসেছিল, যার ফলে ভারত এবং এশিয়ার অন্যান্য অংশ থেকে আমেরিকা ও ইউরোপে যেতে ১৫-২০ দিন সাশ্রয় হচ্ছিল, কিন্তু এখন এই যুদ্ধের কারণে মালবাহী জাহাজগুলি আবার লোহিত সাগর রুট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে, যার ফলে যাত্রা সময় এবং খরচ উভয়ই বাড়বে।

তেহরানের উপর যুদ্ধের ছায়া, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সতর্ক করেছে, অবিলম্বে শহর খালি কর, জি৭ ছেড়ে পালিয়েছেন ট্রাম্প

ভারত ইউরোপের সাথে ৮০% বাণিজ্য লোহিত সাগরের মাধ্যমে করে এবং লোহিত সাগর ও হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে ভারত মোট ৩৪% রপ্তানি করে।

বাসমতী চাল এবং চায়ের উপর প্রভাব
এই যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব বাসমতী চালের রপ্তানির উপরও পড়বে। ভারত প্রতি বছর বৃহৎ পরিমাণে ইরানকে বাসমতী চাল রপ্তানি করে। যুদ্ধ বাড়লে বাসমতী চালের রপ্তানি আটকে যাবে। গত বছর ভারত ইরানকে প্রায় ৬,৭৩৪ কোটি টাকার চাল রপ্তানি করেছিল, যা মোট চাল রপ্তানির প্রায় ২৫% ছিল। রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে ভারতে বাসমতী চালের দামে ১০-১৫% পর্যন্ত পতন দেখা যেতে পারে। একইভাবে ভারত থেকে চায়ের রপ্তানিও প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *