ডিজিসিএ-এর ১৩ জুনের সেই নির্দেশ, যার পর হঠাৎ ফ্লাইট বাতিলের গতি বাড়ল! পুরো সংযোগটি বুঝুন

এয়ার ইন্ডিয়ার আন্তর্জাতিক উড়ান নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ উভয়ই বাড়ছে। মঙ্গলবার একের পর এক এয়ার ইন্ডিয়ার ৭টি প্রধান আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিল করা হয়েছে, যার মধ্যে আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী AI-159, দিল্লি থেকে প্যারিসগামী AI-143, প্যারিস থেকে দিল্লি ফেরত AI-142 এবং লন্ডন থেকে অমৃতসরগামী AI-170 অন্তর্ভুক্ত।
এই উড়ানগুলি হঠাৎ বাতিল হওয়ার পর বিমানবন্দরগুলিতে ব্যাপক হট্টগোল দেখা গেছে, যেখানে যাত্রীরা অভিযোগ করছিলেন যে তাদের উড়ান বাতিল হওয়ার কোনো পূর্ব তথ্য দেওয়া হয়নি। কিন্তু এর পেছনে আসল যে কারণটি সামনে এসেছে, তা সরাসরি ১৩ জুন ২০২৫ তারিখে ডিজিসিএ (DGCA) দ্বারা জারি করা নতুন নিরাপত্তা আদেশের সাথে যুক্ত, যা এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ড্রিমলাইনার ফ্লিটের উপর কার্যকর হয়েছে। যদিও এয়ারলাইন্স এর পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে ফ্লাইট বাতিলের কারণ জানানো হয়নি।
এই সাতটি উড়ান বাতিল হয়েছে:
AI915 – দিল্লি থেকে দুবাই – B788 ড্রিমলাইনার
AI153 – দিল্লি থেকে ভিয়েনা – B788 ড্রিমলাইনার
AI143 – দিল্লি থেকে প্যারিস – B788 ড্রিমলাইনার
AI159 – আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন – B788 ড্রিমলাইনার
AI170 – লন্ডন থেকে অমৃতসর – B788 ড্রিমলাইনার
AI133 – বেঙ্গালুরু থেকে লন্ডন – B788 ড্রিমলাইনার
AI179 – মুম্বাই থেকে সান ফ্রান্সিসকো – B777 ড্রিমলাইনার
এয়ার ইন্ডিয়া বিবৃতি জারি করে বলেছে, “আমাদের যাত্রীদের যে অসুবিধা হয়েছে তার জন্য আমরা দুঃখিত এবং আমরা তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করছি। আমরা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করছি এবং বাতিল বা সম্মানসূচক পুনঃপরিশোধের উপর সম্পূর্ণ টিকিটের অর্থও ফেরত দিচ্ছি।”
১৩ জুনের ডিজিসিএ আদেশটি কী?
আসলে, ১৩ জুন ডিজিসিএ (নাগরিক বিমান চলাচল মহা নির্দেশিকা) একটি বিশেষ আদেশ জারি করেছিল, যেখানে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ড্রিমলাইনার বিমানগুলিকে উড়ানের আগে এ্যানহ্যান্সড সেফটি ইন্সপেকশন অর্থাৎ উন্নত নিরাপত্তা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই আদেশ আহমেদাবাদে হওয়া বিমান দুর্ঘটনার পর জারি করা হয়েছিল।
এই নিরাপত্তা পরীক্ষায় বিমানকে উড়ানের আগে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন ধাপে পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ফুয়েল প্যারামিটার মনিটরিং, কেবিন এয়ার কম্প্রেসার সিস্টেম, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন কন্ট্রোল টেস্ট, ইঞ্জিন ফুয়েল অ্যাকচুয়েটর অপারেশন, অয়েল সিস্টেম এবং হাইড্রোলিক সিস্টেমের পরিষেবা পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত। এর সাথে টেকঅফের আগে প্যারামিটারগুলির সঠিক পর্যালোচনা করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিটি উড়ানের টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম অর্থাৎ বিমান অবতরণ (আগমণ) এবং পরবর্তী উড়ানের জন্য পুনরায় টেক-অফ (প্রস্থান) করার মধ্যবর্তী সময় বেড়ে গেছে, যার ফলে শুধু দেরিই হচ্ছে না, বরং কিছু ফ্লাইট বাতিলও করতে হচ্ছে।
ট্রানজিট ফ্লাইটের উপরও প্রভাব
এই আদেশ শুধু ভারত থেকে টেক-অফ করা ফ্লাইট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। যদি কোনো বিমান ট্রানজিটে থাকে, যেমন সান ফ্রান্সিসকো থেকে মুম্বাইগামী কোনো ফ্লাইট কলকাতা হয়ে আসে, তাহলে কলকাতায় সেটিকে নামিয়ে পুনরায় নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হয়। মঙ্গলবার ঠিক এমনটাই হয়েছে যখন একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে কলকাতা বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে এবং যাত্রীদের বিমান থেকে নামিয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা করা হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার স্বীকারোক্তি
এয়ার ইন্ডিয়াও তাদের বিবৃতিতে স্বীকার করেছে যে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বর্ধিত নিরাপত্তা পরীক্ষা এবং আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে উড়ানগুলির টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম প্রভাবিত হয়েছে, যার ফলে উড়ানগুলিতে বিলম্ব এবং বাতিলের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
হঠাৎ উড়ান বাতিল হওয়ায় যাত্রীরা বিভ্রান্ত এবং ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে যেসব যাত্রী তাদের ভ্রমণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা পাচ্ছেন না। আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে তো যাত্রীরা এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীদের বিরুদ্ধে সময়মতো তথ্য না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন এবং হট্টগোলও করেছেন।
ভবিষ্যতে আরও বাতিল সম্ভব?
তথ্য অনুযায়ী, যতক্ষণ পর্যন্ত এই বিশেষ নিরাপত্তা আদেশ কার্যকর থাকবে, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত বোয়িং ড্রিমলাইনার ফ্লিটকে উড়ানের আগে ছয়-স্তরীয় পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই আশঙ্কা বজায় থাকবে যে অন্যান্য আন্তর্জাতিক উড়ানও প্রভাবিত হতে পারে। এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে সীমিত সংখ্যক ড্রিমলাইনার বিমান রয়েছে, এবং সবগুলির উপর একসাথে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে।
আহমেদাবাদে বৃহস্পতিবার হয়েছিল প্লেন ক্র্যাশ
উল্লেখ্য যে আহমেদাবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে হওয়া প্লেন ক্র্যাশ বোয়িং কো ম্পা নির ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানের সাথে যুক্ত সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। আমেরিকান বিমান নির্মাতা বোয়িং এর এটি সবচেয়ে আধুনিক ওয়াইডবডি এয়ারলাইনার। এয়ার ইন্ডিয়ার এই বিমানটি মাত্র ১২ বছর পুরোনো ছিল এবং দুর্ঘটনার কয়েক ঘন্টা আগে দিল্লি থেকে যাত্রী নিয়ে আহমেদাবাদে পৌঁছেছিল। এতে ২৪২ জন লোক ছিল।
আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের রানওয়ে নম্বর ২৩ থেকে উড়ান ভরার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এটি দ্রুত নিচের দিকে পড়তে শুরু করে এবং একটি আবাসিক এলাকায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ার পর বিশাল অগ্নিগোলকে রূপান্তরিত হয়। এই দুর্ঘটনায় ২৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সেই ভবনে উপস্থিত লোকজনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার সাথে এই বিমানটি ধাক্কা খেয়েছিল।