ভারতে কি করোনার প্রকোপ কমছে? কারণ কী? ২৪ ঘণ্টার রাজ্যভিত্তিক তথ্য জেনে নিন

ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখন ধীরে ধীরে কমতে দেখা যাচ্ছে। সক্রিয় কেসের সংখ্যায় ক্রমাগত পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বুধবার দেশে COVID-19-এর সক্রিয় কেস কমে ৬,৪৮৩ হয়েছে, যা মঙ্গলবার ছিল ৬,৮৩৬।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৩টি নতুন কেস শনাক্ত হয়েছে, যখন চারজনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মৃত্যু মহারাষ্ট্রে, একটি কেরালায় এবং একটি দিল্লিতে হয়েছে। মৃত সকলেই বয়স্ক ছিলেন এবং তাদের শ্বাসযন্ত্রের বা অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ছিল।
দিল্লিতে সর্বাধিক নতুন কেস, কেরালায় সর্বাধিক সক্রিয় কেস
গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে ৬৫টি নতুন কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার ফলে সক্রিয় কেসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২০। অন্যদিকে, কেরালায় সর্বাধিক ১,৩৮৪টি সক্রিয় কেস রয়েছে, তবে সেখানে ২৭৫টি কেসের হ্রাস রেকর্ড করা হয়েছে। গুজরাটে ১,১০৫টি সক্রিয় কেস রয়েছে, যেখানে ১৪৩টি কেসের পতন হয়েছে। কর্ণাটকে ৬৫৩টি এবং মহারাষ্ট্রে ৪৮৯টি সক্রিয় কেস রয়েছে, যেখানে যথাক্রমে ৪৩টি এবং ২৩টি কেসের হ্রাস দেখা গেছে।
মৌসুমী বৃদ্ধি নাকি স্থায়ী হুমকি?
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে COVID-19 কেসের বৃদ্ধির পর, এখন সক্রিয় কেসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এটি ইঙ্গিত করে যে এটি একটি মৌসুমী বৃদ্ধি হতে পারে, ভাইরাসের স্থায়ী পুনরুত্থান নয়। বিশেষজ্ঞরা এটিকে ‘মিনি-ওয়েভ’ (Mini-Wave) হিসেবে দেখছেন, যা মৌসুমী ফ্লুর মতো আচরণ করছে। LF.7, XFG, JN.1, এবং NB.1.8.1-এর মতো নতুন উপ-ভ্যারিয়েন্টগুলির কারণে কেসের বৃদ্ধি দেখা গেছে, তবে JN.1 এখনও ৫৩% কেসের প্রধান ভ্যারিয়েন্ট।
হটস্পট রাজ্যগুলির বর্তমান অবস্থা
কেরালা: ১,৩৮৪ সক্রিয় কেস, ২৪ ঘণ্টায় ২৭৫টি কেস হ্রাস, ১ মৃত্যু (মোট ৩৬ মৃত্যু)
গুজরাট: ১,১০৫ সক্রিয় কেস, ২৪ ঘণ্টায় ১৪৩টি কেস হ্রাস, ২ মৃত্যু
মহারাষ্ট্র: ৪৮৯ সক্রিয় কেস, ২৪ ঘণ্টায় ২৩টি কেস হ্রাস, ২ মৃত্যু (মোট ৩১ মৃত্যু)
দিল্লি: ৬২০ সক্রিয় কেস, ২৪ ঘণ্টায় ৬৫টি নতুন কেস, ১ মৃত্যু (মোট ১৩ মৃত্যু)
উত্তরপ্রদেশ: ২৭৫ সক্রিয় কেস, ২৪ ঘণ্টায় ৩টি নতুন কেস, ২ মৃত্যু
পশ্চিমবঙ্গ: ৭৪৭ সক্রিয় কেস, মোট ১ মৃত্যু
লক্ষণ হালকা, হাসপাতালগুলিতে চাপ কম
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, মুম্বই, পুনে এবং দিল্লির মতো শহরগুলিতে COVID-19-এর গুরুতর কেস খুবই কম। বেশিরভাগ রোগীর জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি এবং ক্লান্তি-এর মতো হালকা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা বাড়িতে প্রাথমিক পরিচর্যায় সেরে যাচ্ছে। ডেল্টা বা প্রাথমিক ওমিক্রন তরঙ্গের বিপরীতে, এবার হাসপাতালে ভর্তি এবং আইসিইউ-এর কেস নগণ্য, যা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান অনাক্রম্যতার (Immunity) ইঙ্গিত দেয়।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? ভয় পাওয়ার দরকার আছে কি না?
যদিও সাধারণ জনগণ অনেকাংশে সুরক্ষিত, তবে বয়স্ক এবং পূর্ব-বিদ্যমান অসুস্থতাযুক্ত ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে আছেন। বিশেষজ্ঞরা ভিড়যুক্ত স্থানে মাস্ক পরা, হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর এবং ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে।
COVID-19 কেসের সংখ্যা কমে যাওয়া স্বস্তির বিষয়, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে সতর্কতা বজায় রাখা জরুরি। মৌসুমী বৃদ্ধি সত্ত্বেও, টিকাকরণ এবং হাইব্রিড ইমিউনিটির কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। যদি আপনার জ্বর, কাশি বা ক্লান্তির মতো লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে অবিলম্বে পরীক্ষা করান এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।