ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র বাড়িয়েছে সবার দুশ্চিন্তা, জেনে নিন কেন?

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র বাড়িয়েছে সবার দুশ্চিন্তা, জেনে নিন কেন?

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে গত ৬ দিন ধরে সংঘাত চলছে। গতদিন ইরানের সুপ্রিম কমান্ডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই (Ayatollah Ali Khamenei) যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। এর সঙ্গে ইসরায়েলের উপর হামলা তীব্র করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার দিকে পুরো বিশ্বের নজর রয়েছে।

যুদ্ধের ঘোষণার পর ইরান দাবি করেছে যে, তারা ইসরায়েলের উপর হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে। তবে ইরানের এই দাবির কোনো প্রমাণ এখনো সামনে আসেনি। এই কারণেই বিশেষজ্ঞরা এই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন।

হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র এমন অস্ত্র যা শব্দের গতির ৫ গুণ বা তার বেশি গতিতে (ম্যাক ৫ বা ৬,১৭৪ কিমি/ঘণ্টার বেশি) উড়ে যায়। এটিকে আটকানো প্রায় আসাম্ভব। এই কারণেই দুই দেশের মধ্যে চলমান যুদ্ধে এর ব্যবহার নিয়ে ভয় তৈরি হচ্ছে।

হাইপারসোনিক শব্দের অর্থ কী?
হাইপারসোনিক সাধারণত এমন অস্ত্রের জন্য ব্যবহৃত হয় যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলে। এর গতির কারণে এটিকে আটকানো কঠিন এবং এটি দ্রুত দিক পরিবর্তন করতে পারে। হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ম্যাক-৫ (শব্দের গতির পাঁচগুণ) অর্থাৎ প্রায় ৬১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিতে বাড়তে পারে। ইরানের দাবি, ফাতাহ-১ (Fattah-1) ক্ষেপণাস্ত্র ম্যাক ১৫ অর্থাৎ প্রায় ১৮০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিতে লক্ষ্যের দিকে এগোতে পারে।

হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে সব ব্যর্থ
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে শনাক্ত করা যায় এবং এটিকে ইন্টারসেপ্টও (Intercept) করা যায়, কারণ উৎক্ষেপণের অনেক সময় পর্যন্ত এটি বাতাসে থাকে। কিন্তু হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ট্র্যাক করা এবং তারপর এর বিরুদ্ধে এয়ার ডিফেন্স ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা খুব কঠিন। এই কারণেই এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির ব্যবহার নিয়ে বিশ্বজুড়ে ভয় ছড়িয়ে পড়ছে। যদি এগুলি এভাবেই ব্যবহার হতে থাকে, তবে ভবিষ্যতে আরও সমস্যা হতে পারে।

ইরানের দাবি নিয়ে সবার সন্দেহ
ইরানের আধা-সামরিক রেভল্যুশনারি গার্ড (Revolutionary Guard) বুধবার দাবি করেছে যে, তারা ইসরায়েলের দিকে হাইপারসোনিক ফাতাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হাইপারসোনিক কিনা, তা বিতর্কের বিষয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, আমেরিকা এবং চীনই একমাত্র দেশ যারা নতুন প্রজন্মের হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে, কিন্তু উভয় দেশই যুদ্ধে এগুলি ব্যবহার করেনি। রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং পাকিস্তানের মতো অন্যান্য দেশ একই রকম কিন্তু কম প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বা ব্যবহার করেছে। ইরানের দাবির পর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, ইরানীদের এগুলো তৈরির ক্ষমতা নেই।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রকে হাইপারসোনিক মানা সঠিক নয় – বিশেষজ্ঞ
ইরান গতদিন দাবি করেছিল যে, তারা ইসরায়েলের উপর হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই দাবির পর থেকেই ইরান সন্দেহের घेरेতে। বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করে বলছেন যে, ইরান কিছু না কিছু চালাকি করছে। এর কারণ হলো, হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ক্ষমতা ইরানের নেই।

ইসরায়েলি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আইএনএসএস (INSS)-এর সিনিয়র গবেষক এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রাক্তন বিজ্ঞানী ইয়েহোশুয়া কালিস্কি (Yehoshua Kalisky) বলেছেন যে, ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলি মোতায়েন করেছে, তার বেশিরভাগই হাইপারসোনিকের মতোই ভ্রমণ করে, কিন্তু সেগুলিকে খুব কমই চালানো যায়, তাই সেগুলিকে সত্যিকার অর্থে হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র হিসাবে ধরা হয় না। ইরান যে ফাতাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, তাতে খুব কমই সফলতা মিলেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *