ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে তার সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়েছে। মার্কিন প্রশাসন বলছে যে এর উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলকে ইরানের হামলা থেকে সুরক্ষা দেওয়া এবং এই অঞ্চলে মোতায়েন করা মার্কিন সেনাদের রক্ষা নিশ্চিত করা।

মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ (Pete Hegseth) মোতায়েন নিশ্চিত করে বলেছেন যে এই পদক্ষেপগুলি “আমাদের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য” নেওয়া হয়েছে। পেন্টাগন (Pentagon) অতিরিক্ত ফাইটার জেট (Fighter Jets), জ্বালানি ভরা ট্যাঙ্কার এবং যুদ্ধজাহাজ কৌশলগত স্থানে পাঠিয়েছে যা আমেরিকার গভীরভাবে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করে বলেছেন, “এখন আমাদের ইরানের পুরো আকাশসীমার উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।” এই বিবৃতির পর জল্পনা তীব্র হয়ে উঠেছে যে আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে বিমান হামলা চালাতে পারে।

তবে, মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেছেন যে মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো মার্কিন বিমান ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি এবং সমস্ত সামরিক কার্যকলাপ বর্তমানে প্রতিরক্ষামূলক, যার উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলের দিকে অগ্রসরমান ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে থামানো।

F-16 থেকে B-52 এবং এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার পর্যন্ত: পুরো সামরিক ব্যবস্থা সক্রিয়
গোপনীয়তার কারণে সঠিক সংখ্যা শেয়ার করা হয়নি, তবে তথ্য অনুযায়ী, ডজনখানেক F-16 ফাইটার জেট সৌদি আরবে (Saudi Arabia) পাঠানো হয়েছে। ডিয়েগো গার্সিয়াতে (Diego Garcia) B-52 বোমারু বিমান প্রস্তুত রয়েছে। যদিও B-2 স্টিলথ বোমারু বিমান, যা ৩০,০০০ পাউন্ডের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ (Bunker Buster) বোমা বহন করতে সক্ষম, তা মোতায়েন করা হয়নি তবে কৌশলগত বিকল্প হিসাবে বিদ্যমান রয়েছে।

বাঙ্কার-বাস্টার বোমা কী?
“বাঙ্কার বাস্টার” একটি সাধারণ শব্দ, যা এমন বোমাগুলির জন্য ব্যবহৃত হয় যা মাটির পৃষ্ঠের বেশ নিচে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। প্রায় ৩০,০০০ পাউন্ড (১৩,৬০০ কিলোগ্রাম) ওজনের এই নির্ভুল নির্দেশিত বোমা বিশেষভাবে মজবুত দুর্গ এবং সুড়ঙ্গ ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। মার্কিন বিমান বাহিনী অনুসারে, এই বোমা পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) নিচে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে, এবং একের পর এক বোমা ফেলে আরও গভীরে প্রভাব ফেলা যেতে পারে।

এই “ম্যাসিভ অর্ডনেন্স পেনিট্রেটর” (Massive Ordnance Penetrator) অর্থাৎ GBU-57 বোমার ব্যবহার ইরানের ফোর্দো (Fordo) পারমাণবিক স্থান ধ্বংস করার জন্য করা যেতে পারে, যা পার্বত্য এলাকায় অত্যন্ত গভীরে অবস্থিত। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, “এমন হামলা শুধু আমেরিকাই করতে পারে কারণ শুধু তারই কাছে এর ক্ষমতা এবং অস্ত্র রয়েছে।”

অরোরা ইন্টেল (Aurora Intel) নামক ওপেন-সোর্স বিশ্লেষণ গোষ্ঠী জানিয়েছে যে, আমেরিকা ইউরোপের বেশ কয়েকটি কৌশলগত ঘাঁটিতে – ইংল্যান্ড (England), স্পেন (Spain), জার্মানি (Germany) এবং গ্রীসে (Greece) – জ্বালানি ভরা বিমান এবং ফাইটার জেট পাঠিয়েছে।

ইউএস নেভির যুদ্ধজাহাজ সরাসরি অংশ নিচ্ছে
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে ইউএসএস দ্য সালিভানস (USS The Sullivans) এবং ইউএসএস আর্লেই বার্ক (USS Arleigh Burke)-এর মতো ডেস্ট্রয়ার জাহাজগুলি সরাসরি ভূমিকা পালন করছে। ইউএসএস কার্ল ভিনসন (USS Carl Vinson) এবং তার স্ট্রাইক গ্রুপ আরব সাগরে (Arabian Sea) মোতায়েন রয়েছে, যখন ইউএসএস নিমিটজ (USS Nimitz)-ও একটি বিকল্প। ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড (USS Gerald R. Ford) আগামী সপ্তাহে ইউরোপীয় কমান্ড থিয়েটারের (European Command Theater) দিকে রওনা হবে। যদিও এই মিশন আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল, তবে এর উপস্থিতি ট্রাম্পকে কৌশলগত সুবিধা দেয়।

স্থলবাহিনীকেও সতর্ক করা হয়েছে
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট অনুসারে, গত কয়েক দিনে আমেরিকা তার স্থলবাহিনীরও (Ground Forces) মোতায়েন বাড়িয়েছে। একটি তৃতীয় নেভি ডেস্ট্রয়ার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে (Eastern Mediterranean Sea) পৌঁছেছে এবং আরেকটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আরব সাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের সংখ্যা ৩০,০০০ থেকে বেড়ে এখন প্রায় ৪০,০০০ হয়েছে। কিছু ঘাঁটিতে মোতায়েন করা সৈন্যদের পরিবারকে স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং সমস্ত সামরিক ঘাঁটি হাই অ্যালার্টে রয়েছে।

গত বছর অক্টোবরেও এই অঞ্চলে উত্তেজনার কারণে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ৪৩,০০০ পর্যন্ত পৌঁছেছিল, যখন ইয়েমেনে (Yemen) ইরান সমর্থিত হুথি (Houthi) বিদ্রোহীরা রেড সি-তে (Red Sea) বাণিজ্যিক এবং সামরিক জাহাজগুলিতে হামলা শুরু করেছিল।