ভগবান জগন্নাথের মূর্তিতে কেন শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় স্পন্দিত হয়, এই রহস্যের উন্মোচন হলো

ওড়িশার পুরীতে অবস্থিত ভগবান জগন্নাথের (Lord Jagannath) মন্দির তার ভেতরে অনেক রহস্য এবং অলৌকিকতা লুকিয়ে রেখেছে। এই মন্দির কেবল একটি আস্থার কেন্দ্রই নয়, বরং অদ্ভুত রহস্য এবং অলৌকিকতার একটি জীবন্ত উদাহরণও বটে।
এখানকার ঐতিহ্য, মূর্তির রহস্য, মন্দিরের পতাকা এবং প্রতি বছর ভগবানের অসুস্থ হওয়া – এই সবের পেছনে গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেন আজও ভগবান জগন্নাথের মূর্তির ভেতরে শ্রীকৃষ্ণের (Lord Krishna) হৃদয় স্পন্দিত হয় এবং এর পেছনের রহস্য কী।
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্বপ্নের যোগসূত্র
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, প্রাচীনকালে মালবের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন (Indradyumna) এক রাতে স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্নে শ্রীকৃষ্ণ তাকে আদেশ দিয়েছিলেন যে তার মূর্তি নিম কাঠ দিয়ে তৈরি করা হোক। এই আদেশের পর রাজা জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করেন। এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত মূর্তিগুলো সাধারণ পাথর বা ধাতু দিয়ে তৈরি নয়, বরং বিশেষ নিম গাছ থেকে তৈরি করা হয়েছে। এই ঐতিহ্য আজও পালন করা হয়।
আজও কেন স্পন্দিত হয় শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়?
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে তার শরীর ত্যাগ করেছিলেন, তখন তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল। তার শরীরের সমস্ত অঙ্গ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তার হৃদয় নষ্ট হয়নি। এটিও বিশ্বাস করা হয় যে, সেই হৃদয় আজও ভগবান জগন্নাথের মূর্তির ভেতরে সুরক্ষিত আছে এবং আজও স্পন্দিত হয়।
প্রতি ১২ বছর অন্তর মূর্তি পরিবর্তন
জগন্নাথ মন্দিরে প্রতি ১২ বছর অন্তর মূর্তিগুলির নবীকরণ করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে ‘নবকলেবর’ (Navakalevara) বলা হয়। এই সময় পুরনো মূর্তিগুলি থেকে একটি রহস্যময় ‘ব্রহ্ম পদার্থ’ (Brahma Padartha) বের করা হয় এবং সেটিকে নতুন মূর্তিগুলিতে স্থাপন করা হয়।
কেন চোখের দৃষ্টি চলে যায়?
পুরোহিতদের মতে, এটিকে হাতে নিলে এমন মনে হয় যেন একটি লাফানো জীব তাদের তালুতে দৌড়াচ্ছে। এই ব্রহ্ম তত্ত্ব কেউ দেখতে পারে না। যদি কেউ এটি দেখার চেষ্টা করে তবে তার মৃত্যু হতে পারে, বা চোখের দৃষ্টি চলে যায়। এই কারণেই এটি স্থানান্তরিত করার সময় পুরোহিতরা চোখে পট্টি বেঁধে বিশেষ পদ্ধতিতে এই কাজ সম্পন্ন করেন।
মূর্তিগুলির চোখ এত বড় কেন?
ভগবান জগন্নাথের মূর্তিগুলির সবচেয়ে বিশেষ বিষয় হলো তাদের বিশাল চোখ। বিশ্বাস করা হয় যে, যখন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ভগবানের দর্শনের জন্য এসেছিলেন, তখন তার ভক্তি দেখে ভগবান এত খুশি হয়েছিলেন যে আশ্চর্য ও করুণায় তার চোখ প্রসারিত হয়ে গিয়েছিল। এই কারণেই আজও তার মূর্তিগুলির চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গুণ বড় দেখায়।
সিংহদ্বারের রহস্য
জগন্নাথ মন্দিরের সিংহদ্বারও রহস্যে ঘেরা। মন্দিরের বাইরে দাঁড়ালে সমুদ্রের ঢেউয়ের আওয়াজ কানে বাজে, কিন্তু যেই আপনি মন্দিরে প্রবেশ করেন, এই আওয়াজ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। এটি এমন একটি রহস্য, যা বিজ্ঞানও আজ পর্যন্ত পুরোপুরি বুঝতে পারেনি।