চীনের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রাগার, পাকিস্তানের ক্ষমতায় সেনাবাহিনীর ক্রমবর্ধমান আধিপত্য, ভারতের জন্য বিপদঘণ্টা!

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর একটি নতুন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিশ্ব একটি নতুন এবং বিপজ্জনক পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করছে। চীন দ্রুত তার পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার বাড়াচ্ছে। আঞ্চলিক বিবাদ পারমাণবিক যুদ্ধে রূপান্তরিত হতে পারে। SIPRI-এর ২০২৫ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, চীন ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১০০টি পারমাণবিক অস্ত্র বাড়িয়েছে। এখন তাদের কাছে ৬০০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এটি ভারতের (১৮০টি) চেয়ে অনেক বেশি। চীন এমন সময়ে বিপজ্জনকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বাড়াচ্ছে, যখন আমেরিকা ও রাশিয়া পুরনো অস্ত্র ধ্বংস করছে। তাই সামগ্রিকভাবে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।

‘লঞ্চ-অন-ওয়ার্নিং’ নীতি গ্রহণ করতে পারে চীন
SIPRI-এর অনুমান, ২০২৫ সালের শুরুতে বিশ্বে প্রায় ১২,২৪১টি পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। এর মধ্যে ৩,৯০০টিরও বেশি চালু অবস্থায় রয়েছে। ২,১০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। SIPRI-এর মতে, চীন কেবল তার অস্ত্রের সংখ্যাই বাড়াচ্ছে না, বরং তার পারমাণবিক নীতিও পরিবর্তন করছে। মনে হচ্ছে চীন এখন কম অস্ত্র রাখতে সন্তুষ্ট নয়। তারা ‘লঞ্চ-অন-ওয়ার্নিং’ (Launch-on-warning) নীতি গ্রহণ করতে পারে। এর মানে হলো, শত্রুর হামলার সতর্কতা পেলেই তারা সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা হামলা চালাতে পারে।

অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ড্রাগন, ভারতের জন্য বিপদঘণ্টা
চীন সব ধরনের হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবল রি-এন্ট্রি ভেহিকেল (MIRV) প্রযুক্তি তৈরি করছে। MIRV প্রযুক্তির সাহায্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র একই সাথে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। চীন ২০৩৫ সালের মধ্যে ১,৫০০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে। এটি তাদের পুরনো নীতির থেকে অনেক আলাদা। আগে তারা কম অস্ত্র রাখার নীতি অনুসরণ করত। চীনের অস্ত্র প্রতিযোগিতায় এই ক্রমবর্ধমান নীতি ভারতের জন্য একটি বড় বিপদঘণ্টা।

ভারতও পাল্টা ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট
প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতও গত বছর তার পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কিছুটা বাড়িয়েছে। তারা ১৭২টি থেকে ১৮০টি অস্ত্র করেছে। তারা তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও উন্নত করছে। SIPRI-এর মতে, ভারতের নতুন অগ্নি-প্রাইম (Agni-Prime) এবং অগ্নি-৫ (Agni-5) ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ক্যানিস্টার (ধাতব পাত্র) এ রাখা হয়। এর ফলে এগুলি শান্তির সময়েও মোতায়েন করা যেতে পারে। Agni-5-এর ২০২৩ সালে MIRV সহ পরীক্ষা করা হয়েছিল। এটি প্রমাণ করে যে, ভারতও পাল্টা হামলার ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। কিন্তু, চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির তুলনায় এটি এখনও অনেক কম। ভারতের স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড (Strategic Forces Command) তার সামুদ্রিক শক্তিও বাড়াচ্ছে। তাদের কাছে দুটি শিপ সাবমার্সিবল ব্যালিস্টিক নিউক্লিয়ার (SSBN – আইএনএস অরিহন্ত এবং আইএনএস অরিঘাত) রয়েছে। তৃতীয়টি (আইএনএস অরিদমন)ও শীঘ্রই যুক্ত হতে চলেছে। SIPRI-এর মতে, ভারতের এখন পারমাণবিক অস্ত্রের একটি শক্তিশালী ত্রিভুজ রয়েছে। অর্থাৎ, তারা স্থল, আকাশ এবং সমুদ্র থেকে পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে।

পাকিস্তানও সামরিক ক্ষমতা বাড়াতে জোর দিচ্ছে
পাকিস্তানও সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। তারা তাদের বাবর-৩ (Babur-3) ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বাড়াচ্ছে। এটি আগোস্টা-৯০বি (Agosta-90B) ডুবোজাহাজে মোতায়েন করা হবে। SIPRI-এর মতে, পাকিস্তানের ত্রিভুজটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি বিকশিত হচ্ছে। SIPRI ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ৭-১০ মে-র সামরিক সংঘাতকে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই সংঘাতে ভারত পাকিস্তানের সারগোদা এবং নূর খান বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল। এই দুটি স্থান পাকিস্তানের পারমাণবিক ঘাঁটির কাছে অবস্থিত। সারগোদা পাকিস্তানের পারমাণবিক ঘাঁটি কিরানা হিলসের কাছে অবস্থিত। অন্যদিকে নূর খান তার স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশন সদর দফতরের কাছাকাছি অবস্থিত। SIPRI-এর একজন গবেষক সতর্ক করেছেন, “পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা এবং ভুল তথ্যের কারণে একটি সাধারণ যুদ্ধ পারমাণবিক যুদ্ধে রূপান্তরিত হতে পারে।” এই পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক কারণ পাকিস্তানি ক্ষমতার উপর সেনাবাহিনীর আধিপত্য বেড়ে গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানি সেনাপ্রধান আসিফ মুনীরকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়ে এই বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *