ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের বড় সুবিধা, দুই দিনে ৭০০ পাকিস্তানি পালিয়েছে!

ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের বড় সুবিধা, দুই দিনে ৭০০ পাকিস্তানি পালিয়েছে!

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাব এখন শুধু ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমাবর্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই যুদ্ধের মাঝে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যা ইরানের জন্য অপ্রত্যাশিত সুবিধা হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে। ইসরায়েলি বিমান হামলার পর বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি নাগরিক এবং আফগান অনুপ্রবেশকারী ইরান ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

যদি এই হামলা না হতো, তাহলে এই লোকেরা ইরানেই থেকে যেত। কিন্তু এখন নিরাপত্তার অজুহাতে ইরান তাদের বের করে দিতে শুরু করেছে।

ইরানে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের একটি বড় অংশ এখন পাকিস্তানে ফিরে আসছে। সোমবারই ৭৭৩ জন পাকিস্তানি, যাদের মধ্যে ৫৪৫ জন তীর্থযাত্রী এবং ২২৮ জন ছাত্র ছিল, তাদের সবাইকে বাসে করে ইরান থেকে পাকিস্তানের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ইরানের তাফতান সীমান্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা তাদের গ্রহণ করেছেন। বেশিরভাগ লোককে তেহরান এবং তার আশেপাশের শহরগুলো থেকে আনা হয়েছিল।

ইরানে পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ
ইরানে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ। ইরানি প্রশাসন সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের হোস্টেল খালি করতে বলা হয়েছে। এই কারণেই শত শত পাকিস্তানি ছাত্রকেও সেখান থেকে বের করে পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে যে, প্রথমে তাদের তেহরান আনা হয়েছিল এবং সেখান থেকে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে শুধু ছাত্ররাই নয়, যারা পাকিস্তান থেকে এসে ইরানে অবৈধভাবে বসবাস করছিল, তারাও অন্তর্ভুক্ত।

ইরাক থেকেও ফিরছেন পাকিস্তানি তীর্থযাত্রীরা
শুধু ইরান নয়, ইরাক থেকেও পাকিস্তানি তীর্থযাত্রীদের প্রত্যাবর্তন শুরু হয়েছে। সোমবার দুটি বিশেষ ফ্লাইটে ২৬৮ জন পাকিস্তানি তীর্থযাত্রীকে বসরা থেকে করাচি এবং ইসলামাবাদে আনা হয়েছে। ইরাকি এয়ারওয়েজ এবং পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে যাতে যুদ্ধের হুমকির মধ্যে পাকিস্তানি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

আফগানরাও ইরান ও পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত
এই পুরো ঘটনা প্রবাহে শুধু পাকিস্তানিরা নয়, আফগান অনুপ্রবেশকারীদেরও ইরান থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। ১৩ থেকে ১৬ জুনের মধ্যে প্রায় ১,৯৯৪ আফগান পরিবারকে ইরান থেকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে অনেককে জোরপূর্বক বের করা হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান থেকেও ২৩৮টি আফগান পরিবারের প্রত্যাবর্তন হয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলি তালিবানের মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বিএনএ (BNA) থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

ইরান দিয়েছিল ডেডলাইন, এখন দেখা যাচ্ছে প্রভাব
ইরানের পুলিশ আগেই ঘোষণা করেছিল যে, ৫ জুলাইয়ের মধ্যে সমস্ত অবৈধ অভিবাসীকে দেশ ছাড়তে হবে, অন্যথায় গ্রেপ্তার এবং নির্বাসন হবে। এখন মনে হচ্ছে, ইসরায়েলি হামলার পর ইরান এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাগরিকরা এখন দ্রুত বের হয়ে যাচ্ছে।

যদি হামলা না হতো, তাহলে এরা সেখানেই থাকত
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ইসরায়েল বিমান হামলা না করত, তাহলে ইরান এত তাড়াতাড়ি অবৈধ বা অননুমোদিত পাকিস্তানি এবং আফগান নাগরিকদের বের করত না। কিন্তু যুদ্ধের হুমকি ইরানকে অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতার সুযোগ করে দিয়েছে। এই লোকেরাই দীর্ঘদিন ধরে ইরানে বসবাস করছিল এবং অনেক সময় তাদের পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল।

ইরানের জন্য এটি কেন স্বস্তির?
ইরান ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক সংকট এবং অভ্যন্তরীণ উত্তেজনার সঙ্গে লড়াই করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বোঝা তার জন্য একটি অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন ইসরায়েলি হামলার কারণে যখন নিরাপত্তার আড়ালে পাকিস্তানি এবং আফগান নাগরিকরা বের হয়ে যাচ্ছে, তখন ইরান অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং সম্পদের উপর চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। অর্থাৎ, এই বিমান হামলা যুদ্ধের শুরু হলেও, ইরান এর থেকে একটি অপ্রত্যাশিত সুবিধাও পেয়ে গেল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *