৪৩ বছরের সুপারফিট মহিলার হঠাৎ বন্ধ হলো হৃদস্পন্দন, এই একটি সংকেতকে অবহেলা করা হল মারাত্মক!

আপনি যদি মনে করেন যে, প্রতিদিনের ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ফিট শরীর আপনাকে হৃদরোগের সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রাখতে পারে, তাহলে এই খবরটি আপনাকে চমকে দিতে পারে। ব্রিটেনের ৪৩ বছর বয়সী সুপারফিট ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক এমা হোল্ডসওয়ার্থ (Emma Houldsworth)-এর গল্প সত্যিই হৃদয়বিদারক।
এমার জীবনযাপন ছিল সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর। তিনি একজন ফিটনেস প্রশিক্ষক, প্রতিদিন ওয়ার্কআউট করেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, ধূমপান বা মদ্যপান থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু ২৬ এপ্রিল সকালে যখন তিনি তার কুকুরকে হাঁটতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই হঠাৎ করে তার ক্লান্তি অনুভূত হয় এবং তিনি ফুটপাতে বসে পড়েন। পরের মুহূর্তে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান এবং তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
সিপিআর (CPR) বাঁচাল প্রাণ
এমার সঙ্গী পল টিলি (Paul Tilly) দ্রুত পদক্ষেপ নেন। তিনি সিপিআর (Cardiopulmonary Resuscitation) শুরু করেন, যার ফলে এমার তিনটি পাঁজর ভেঙে যায়, কিন্তু তার জীবন রক্ষা পায়। ঠিক সেই সময় একজন নার্স সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন, যিনি সিপিআর-এর দায়িত্ব নেন। কেউ কুকুরকে সামলান এবং অন্য একজন ডিফিব্রিলেটর (defibrillator) আনতে দৌড়ে যান। তিনবার ডিফিব্রিলেটর দিয়ে শক দেওয়ার পর এমার হৃদপিণ্ড আবার স্পন্দিত হতে শুরু করে। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে লিডস জেনারেল ইনফার্মারিতে (Leeds General Infirmary) নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে তিন দিন আইসিইউতে (ICU) রাখা হয়। ডাক্তাররা জানান যে, যদি কয়েক মিনিটের মধ্যে সিপিআর এবং ডিফিব্রিলেশন না পাওয়া যেত, তাহলে হয়তো এমার জীবন রক্ষা পেত না।
শুধুই ক্লান্তি ছিল একমাত্র সংকেত
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় ছিল যে, এমাকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের আগে কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা যায়নি, কেবল ক্লান্তি এবং শারীরিক অবসাদ অনুভব করেছিলেন। তিনি জানান, “আমি প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা কাজ করি, বেশ চাপের মধ্যে থাকি এবং নিজের যত্ন নিচ্ছিলাম না। আমি আমার ক্লায়েন্টদের সেই একই কথা বলি, কিন্তু নিজে মানছিলাম না।”
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী এবং কেন হয়?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং হার্ট অ্যাটাক দুটি ভিন্ন পরিস্থিতি। হার্ট অ্যাটাকে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, যখন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ বিঘ্নিত হয় এবং সেটি স্পন্দন বন্ধ করে দেয়। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হঠাৎ হয় এবং যদি কয়েক মিনিটের মধ্যে সিপিআর এবং ডিফিব্রিলেশন না হয়, তাহলে মৃত্যু নিশ্চিত। উল্লেখ্য যে, ব্রিটেনে প্রতি বছর ৩০,০০০ মানুষ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হন, যার মধ্যে মাত্র ১০% বেঁচে থাকেন। আমেরিকায় এই সংখ্যা ৩.৫ লাখেরও বেশি।
কারা ঝুঁকিতে আছেন?
যদিও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, তবে প্রতি ১০টির মধ্যে একটি ঘটনা ৪৫ বছরের কম বয়সী সুস্থ এবং ফিট ব্যক্তিদের মধ্যে ঘটে। উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কাজ, অজ্ঞাত হৃদরোগ এবং বেশি শারীরিক পরিশ্রম এর প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম।
এমা কী শিখলেন?
এমা এখন তার জীবনের অগ্রাধিকার পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, “আমি এখন কম কাজ করতে চাই, বেশি আরাম, যোগা, হাঁটা এবং প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাতে চাই।” এই ঘটনাটি আমাকে শিখিয়েছে যে, ক্লান্তি বা অবসাদকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। যখন শরীর কিছু সংকেত দেয়, তখন সেগুলোকে অবহেলা করা প্রাণঘাতী হতে পারে।
সকলের জন্য শিক্ষা
এই গল্পটি শুধু এমার নয়, আমাদের সবার। আমাদের মধ্যে অনেকেই ক্লান্তি, মানসিক চাপ এবং দুর্বলতাকে স্বাভাবিক মনে করে উপেক্ষা করে থাকি। কিন্তু আমাদের শরীরের কথা শোনা জরুরি। যদি আপনি ক্রমাগত ক্লান্ত অনুভব করেন, মাথা ঘোরায় বা শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট যে কাউকে, যেকোনো বয়সে হতে পারে এবং প্রায়শই এটি কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই আসে। তাই, সিপিআর সম্পর্কে জ্ঞান রাখা, শরীরের সংকেতগুলি বোঝা এবং সময় মতো চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।