চীনের এই মেশিন দেখে আমেরিকা কেন ভয় পাচ্ছে? তিনটি বড় কো ম্পা নি আমেরিকায় উৎপাদন শুরু করেছে

চীনের এই মেশিন দেখে আমেরিকা কেন ভয় পাচ্ছে? তিনটি বড় কোম্পানি আমেরিকায় উৎপাদন শুরু করেছে

বিশ্বের তিনটি সর্বাধিক বিক্রিত বিটকয়েন মাইনিং মেশিন (Bitcoin Mining Machine) প্রস্তুতকারক সংস্থা— বিটমেইন (Bitmain), ক্যানান (Canaan) এবং মাইক্রোবিটি (MicroBT), যারা সবাই চীনের, এখন আমেরিকায় তাদের প্ল্যান্ট স্থাপন করছে। এর কারণ হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের নীতি, যা ক্রিপ্টো শিল্পের সাপ্লাই চেইনকে (supply chain) নাড়িয়ে দিয়েছে।

এই তিনটি কো ম্পা নি বিশ্বজুড়ে ৯০%-এরও বেশি মাইনিং মেশিন তৈরি করে, যা বিশেষ করে বিটকয়েন উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকায় ইউনিট শুরু করার ফলে এই কো ম্পা নিগুলো আমেরিকান ট্যাক্স (শুল্ক) থেকে বাঁচতে পারবে, তবে এর ফলে চীনকে নিয়ে আমেরিকার নিরাপত্তা উদ্বেগও বাড়তে পারে।

ক্রিপ্টো কো ম্পা নি কনফ্লাক্স নেটওয়ার্ক (Conflux Network)-এর চিফ টেকনোলজি অফিসার গুয়াং ইয়াং (Guang Yang) বলেছেন, “আমেরিকা-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ বিটকয়েন সাপ্লাই চেইনে গভীরভাবে পরিবর্তন আনছে, শুধু উপরের স্তরে নয়।” তিনি আরও বলেন যে, আমেরিকান কো ম্পা নিগুলোর জন্য এটি কেবল ট্যাক্সের বিষয় নয়, বরং “রাজনৈতিকভাবে সুরক্ষিত” হার্ডওয়্যারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি কৌশল।

তিনটি কো ম্পা নির কৌশল
বিটমেইন: ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমেরিকায় উৎপাদন শুরু করেছে, ট্রাম্পের নির্বাচনী জয়ের পরপরই।
ক্যানান: আমেরিকায় ট্রায়াল প্রোডাকশন (trial production) শুরু করেছে যাতে ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত নতুন ট্যাক্স থেকে বাঁচা যায়।
মাইক্রোবিটি: জানিয়েছে যে, তারা আমেরিকায় তাদের উৎপাদন স্থানীয় স্তরে শুরু করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
এই কো ম্পা নিগুলোর বাজার মূল্য ২০২৮ সালের মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে।

মার্কিন কো ম্পা নিগুলোর আপত্তি
আমেরিকার ক্রিপ্টো কো ম্পা নি অরডাইন (Auradine), যাকে মারা হোল্ডিংস (MARA Holdings) সমর্থন করেছে, চীনা মেশিনের সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানাচ্ছে। তাদের বক্তব্য হলো, একদিকে যেখানে ৩০% বিটকয়েন মাইনিং আমেরিকায় হয়, অন্যদিকে ৯০%-এরও বেশি হার্ডওয়্যার চীন থেকে আসে, যা সাপ্লাই-ডিমান্ডে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।

অরডাইনের কর্মকর্তা সঞ্জয় গুপ্ত বলেছেন যে, চীন থেকে আমদানি করা লক্ষ লক্ষ মেশিনের আমেরিকান বিদ্যুৎ গ্রিডের (power grid) সাথে যুক্ত হওয়া একটি নিরাপত্তা হুমকি হতে পারে। যদিও ক্যানানের কর্মকর্তা লিও ওয়াং (Leo Wang) বলেছেন যে, মাইনিং মেশিনগুলো কেবল বিটকয়েন মাইনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং অন্য কোনো কাজে উপযোগী নয়, তাই হুমকির কোনো ব্যাপার নেই। তবুও, আমেরিকা কর্তৃক চীনের হাই-টেক কো ম্পা নিগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে ক্ষতি হতে পারে। বিটমেইনের এআই (AI) কো ম্পা নি সফগো (Sophgo)-কে ইতিমধ্যেই আমেরিকা ব্ল্যাকলিস্ট (blacklist) করেছে। বিটমেইন এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

চীনের বাইরে মুখ ফেরাচ্ছে কো ম্পা নিগুলো
২০১৯ সাল পর্যন্ত চীন বিটকয়েন মাইনিং থেকে ট্রেডিং পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত, কিন্তু ২০২১ সালে চীন সরকার ক্রিপ্টোকে নিষিদ্ধ করে। এরপর মাইনার (miner) এবং এক্সচেঞ্জ কো ম্পা নিগুলো বাইরে চলে যায়, কিন্তু হার্ডওয়্যার কো ম্পা নিগুলো যেমন বিটমেইন, ক্যানান এবং মাইক্রোবিটি এখনও এই ক্ষেত্রে আধিপত্য বজায় রেখেছে। ক্যানান তাদের সদর দফতর এখন সিঙ্গাপুরে স্থানান্তরিত করেছে এবং আমেরিকায় একটি উৎপাদন লাইন শুরু করেছে, কারণ আমেরিকা তাদের ৪০%-এরও বেশি রাজস্ব প্রদান করে।

শুল্ক এবং নতুন চ্যালেঞ্জ
আমেরিকা এখন চীন থেকে আসা পণ্যগুলিতে ৩০% পর্যন্ত ট্যাক্স (tariff) আরোপ করেছে। ট্রাম্প নিজেকে “ক্রিপ্টো ফ্রেন্ডলি” নেতা বলে অভিহিত করেন এবং তিনি আমেরিকান বিটকয়েন রিজার্ভ (Bitcoin Reserve) তৈরির পরিকল্পনাও শুরু করেছেন। কিন্তু তার নীতিগুলো চীনের বড় ভূমিকাকে তুলে ধরছে, যার ফলে উদ্বেগও বাড়ছে।

ক্রিপ্টো আইন বিশেষজ্ঞ জন ডিটন (John Deaton) বলেছেন যে, যদি চীন মাইনিং মেশিনের রপ্তানি বন্ধ করে বা সরবরাহে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে এটি বিটকয়েন নেটওয়ার্কের স্থিতিশীলতা এবং আমেরিকান বিনিয়োগকারীদের উপর প্রভাব ফেলবে। যদিও এই চীনা কো ম্পা নিগুলো আমেরিকায় কারখানা খুলছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমেরিকান কো ম্পা নিগুলো তাদের কাছ থেকেই মেশিন কিনছে এবং ট্যাক্সের বোঝা বহন করছে। ক্রিপ্টো টেকনোলজিস্ট কাডেন স্ট্যাডলম্যান (Kadan Stadelmann) বলেন, “এই পদক্ষেপগুলো ক্রিপ্টো শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য নয়, বরং সিস্টেমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *