এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় বড় তথ্য ফাঁস, এই কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল!

এই দুর্ঘটনায় মোট ২৭০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ২৪১ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য ছিলেন। এছাড়া কিছু মেডিকেল ছাত্র ও অন্যান্য মানুষও এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের (Wall Street Journal) রিপোর্টে এই তথ্য সামনে এসেছে, যদিও বোয়িং (Boeing) এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171 দুর্ঘটনায় একটি বড় তথ্য সামনে এসেছে। মামলার তদন্তকারী দল একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র খুঁজে পেয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, দুর্ঘটনার সময় বিমানের ইমার্জেন্সি পাওয়ার সিস্টেম অর্থাৎ র্যাম এয়ার টারবাইন (RAT) সক্রিয় ছিল। এই তথ্যের পর প্রশ্ন উঠেছে যে, টেক-অফের সময় কি দুটি ইঞ্জিনই খারাপ হয়ে গিয়েছিল নাকি অন্য কোনো গুরুতর প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দিয়েছিল।
র্যাম এয়ার টারবাইন (RAT) কী?
প্রতিটি বড় বিমানে একটি ব্যাকআপ পাওয়ার সিস্টেম থাকে যাকে র্যাম এয়ার টারবাইন বলা হয়। এটি একটি ছোট প্রপেলার (propeller) যা বিমানের পেছনের অংশে থাকে এবং যখন প্রধান ইঞ্জিন বা পাওয়ার সিস্টেম অকেজো হয়ে যায়, তখন এটি সক্রিয় হয়ে বিমানের প্রয়োজনীয় সিস্টেমগুলিকে বিদ্যুৎ এবং হাইড্রোলিক শক্তি সরবরাহ করে। সাধারণত এর প্রয়োজন তখনই পড়ে যখন ইঞ্জিনগুলি খারাপ হয়ে যায়।
RAT কখন সক্রিয় হয়?
র্যাট সিস্টেম নিজে থেকেই সক্রিয় হয়ে যায় যখন দুটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় বা হাইড্রোলিক চাপ কমে যায়। এছাড়া, যদি ককপিটে বিদ্যুৎ চলে যায় বা ইলেকট্রিক মোটর পাম্পে ত্রুটি দেখা যায়, তাহলেও এটি চালু হতে পারে। পাইলটরাও চাইলে এটি ম্যানুয়ালি (manually) সক্রিয় করতে পারেন।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রীর অভিজ্ঞতা
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন যাত্রী, বিশ্বাস কুমার, জানিয়েছেন যে টেক-অফের পর বিমানটি থেমে গিয়েছিল বলে মনে হচ্ছিল, তারপর জোরে আওয়াজ হয় এবং বিমানটি নিচে পড়তে শুরু করে। এর থেকে অনুমান করা হচ্ছে যে, সেই সময়ই র্যাট সিস্টেম সক্রিয় হয়ে গিয়েছিল। এয়ার কমোডর এ. এস. বহেল (A. S. Bahel)-ও এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, RAT একটি ব্যাকআপ সিস্টেম যা সীমিত সময়ের জন্য সীমিত সিস্টেমকে শক্তি সরবরাহ করে। এত বড় বিমানকে বাতাসে ধরে রাখার জন্য এর ক্ষমতা যথেষ্ট নয়। পাইলটরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বিমানটি একটি ভবনের সঙ্গে ধাক্কা খায়। যদি রানওয়ের সামনে খোলা মাঠ থাকত, তাহলে হয়তো পরিস্থিতি আরও ভালো হতে পারত।
উন্নত ইঞ্জিন থাকা সত্ত্বেও কেন দুর্ঘটনা ঘটল?
বোয়িং 787-এ অত্যন্ত উন্নত ইঞ্জিন লাগানো থাকে, যা একটি ইঞ্জিনের সাহায্যেও বিমানকে ওড়ার ক্ষমতা দেয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কোথাও না কোথাও কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি উপেক্ষা করা হয়েছিল। কিছু রিপোর্টে এও জানানো হয়েছে যে, বোয়িংয়ের কিছু কর্মকর্তা নিরাপত্তা সংক্রান্ত ত্রুটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
সেদিন কী হয়েছিল?
ফ্লাইটটি স্বাভাবিকভাবে উড়েছিল এবং ৬২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু উড়ানের ৫০ সেকেন্ডের মধ্যেই এর ট্রান্সপন্ডার ডেটা (transponder data) বন্ধ হয়ে যায়। ‘মে ডে’ (MayDay) কলের পরপরই পাইলটের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনাটি অনেক প্রযুক্তিগত এবং প্রশাসনিক প্রশ্ন তৈরি করে, যার গভীরে পৌঁছানো প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।