ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধের কারণে অপরিশোধিত তেলের রকেট গতি, ভারতসহ পুরো বিশ্বে ধাক্কা!

১৩ জুন যখন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, তখন থেকে পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা আকাশ ছুঁয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ এক সপ্তাহের মধ্যেই চরমে পৌঁছেছে। এই যুদ্ধে আমেরিকারও ঝাঁপিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই যুদ্ধের প্রভাব শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, অপরিশোধিত তেলের দাম রকেটের গতিতে বেড়ে গেছে।
গত এক সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের দাম ১৩% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈশ্বিক বাজারে আতঙ্ক বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, ভারতসহ যারা অপরিশোধিত তেল আমদানি করে, তাদের মধ্যে উদ্বেগ আরও গভীর হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রথম স্ট্রাইকের পর দাম ৭ শতাংশ বাড়ল
রয়টার্সের (Reuters) তথ্য অনুযায়ী, ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরান (Tehran) এবং ইসফাহানের (Isfahan) মতো শহরগুলোতে হামলা শুরু করতেই বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। অপরিশোধিত তেলের দাম ৬৯.৩৬ ডলার থেকে সরাসরি ৭৪.২৩ ডলার প্রতি ব্যারেলে পৌঁছে যায় – অর্থাৎ প্রায় ৭% বৃদ্ধি পায়।
এক সপ্তাহে দামে রকেট গতি
সিএনবিসি (CNBC)-এর রিপোর্ট অনুসারে, ১৩ থেকে ১৯ জুনের মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে ৭৭.০৬ ডলার প্রতি ব্যারেলে পৌঁছেছে, অন্যদিকে আমেরিকান ডব্লিউটিআই (WTI) অপরিশোধিত তেল ৭৫.৬৮ ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। রয়টার্সের ১৭ জুনের রিপোর্ট বলছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে তেলে ১০ ডলার প্রতি ব্যারেল পর্যন্ত ‘ঝুঁকি প্রিমিয়াম’ (risk premium) যুক্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, ব্লুমবার্গ (Bloomberg) অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় রয়েছে যে, ইরান যেন হর্মুজ প্রণালী (Strait of Hormuz) বন্ধ না করে দেয়, যার ফলে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন (supply chain) বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং তেলের দাম ১২০ ডলার প্রতি ব্যারেল পর্যন্ত যেতে পারে।
ভারতের উপর কী প্রভাব?
ভারত তার তেলের প্রায় ৮৫% আমদানি করে। এমন পরিস্থিতিতে অপরিশোধিত তেলের দামে প্রতি ১ ডলারের বৃদ্ধি সরাসরি রুপির মূল্য, পেট্রোল-ডিজেলের দাম এবং মুদ্রাস্ফীতির (inflation) উপর প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি তেলের দাম ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সরকারি ভর্তুকির (subsidy) উপর চাপ বাড়বে এবং রাজস্ব ঘাটতি (fiscal deficit) আরও গভীর হবে। জ্বালানি বিশ্লেষক অম্বুজ আগরওয়াল (Ambuj Agarwal) বলেছেন, “এটি কেবল তেলের নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি। যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, দাম তত বাড়তে পারে।” এস অ্যান্ড পি গ্লোবালের (S&P Global) রিপোর্ট অনুসারে, “তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো যদি উৎপাদন না বাড়ায়, তাহলে আগামী সপ্তাহগুলোতে দাম ৮৫-৯০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।”