মরতে চলেছিল… মন্দিরের ঘণ্টা নিজে বাজল! গ্রামবাসী বলে ভগবান নেমে এসেছিলেন

বিহারের পশ্চিম চম্পারনের একটি ছোট্ট গ্রাম ‘বেলওয়ার’ (Belwa) গল্প এটি। এখানকার শিব মন্দিরের একটি ঘণ্টা গত পঞ্চাশ বছর ধরে বাজেনি। জং ধরা সেই লোহার ঘণ্টার দিকে লোকজন ফিরেও তাকাতো না, কারণ বিশ্বাস ছিল যে এটি আর কখনো বাজবে না।
মন্দিরের বাইরে বটগাছের ছায়ায় বসে থাকা প্রবীণরাও বলতেন— ‘ওটা এখন শুধু দেখার জিনিস, বাজানোর নয়।’ কিন্তু এই গল্প সেখান থেকেই শুরু হয়, যেখানে জীবন প্রায় শেষ হতে চলেছে।
হতাশ মনের শেষ প্রার্থনা
তরুণ রাজেশ, ঋণ এবং বেকারত্বের বোঝা নিয়ে ভেঙে পড়েছিল। ২৮ বছর বয়সী এই ছেলেটি ক্রমাগত চেষ্টায় ব্যর্থ হচ্ছিল। তার বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের ওপর ব্যাংক ঋণ এবং সুদের কারবারিদের চাপ ছিল। এক রাতে, যখন সব রাস্তা বন্ধ মনে হচ্ছিল, তখন সে সোজা মন্দিরের বাইরে গেল। রাত তখন প্রায় আড়াইটা। গ্রাম ঘুমিয়ে ছিল। মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে সে বলল, ‘যদি কোনো রাস্তা অবশিষ্ট থাকে, তবে বলে দাও ভোলেনাথ… নয়তো আমি এখন চললাম।’ এবং পরের মুহূর্তেই… মন্দির থেকে একটি তীব্র শব্দ উঠল।
রাতের নিস্তব্ধতায় লোহার ঘণ্টার জবাব
ঘণ্টার শব্দ শুধু রাজেশকে নয়, গ্রামের অর্ধেক মানুষকে জাগিয়ে তুলল। লোকজন ছুটে মন্দিরে পৌঁছাল। যখন দেখা গেল সেই জং ধরা ঘণ্টাটি নিজে নিজেই বেজে উঠেছে, তখন সবাই অবাক হয়ে গেল। পূজারীও বাইরে এলেন। কেউ এটিকে ছোঁয়ওনি। রাজেশ সেখানেই মেঝেতে বসে কাঁপছিল। সে সবাইকে জানাল যে সে কী চেয়েছিল, এবং কীভাবে জবাব পেল। পরের দিন থেকে রাজেশের জীবন পুরোপুরি বদলে গেল।
যখন জবাব আসে আকাশ থেকে
সেই ঘটনার পর গ্রামে রাজেশকে মন্দিরের সেবার জন্য ডাকা হলো। প্রথমে সে ঝাড়ু দিতে শুরু করল, তারপর ধীরে ধীরে পূজা-অর্চনা শিখতে লাগল। আজ সে মন্দিরের পূজারী। নিজেকে নয়, সে নিজেকে ভোলেনাথের ইচ্ছার মাধ্যম মনে করে। গ্রামে এখন প্রতি সোমবার বিশেষ আরতি হয়, এবং সেই ঘণ্টাটিই প্রথমে বাজানো হয় যা একসময় বাতিল বলে মনে করা হতো।
যেখানে অলৌকিক ঘটনা দিকনির্দেশনা তৈরি করেছে
গ্রামবাসীরা বলেন যে, সেটি শুধু একটি অলৌকিক ঘটনা ছিল না, সেটি ছিল একটি সতর্কতা — সাহস হারিয়ো না, ভগবান শোনেন। মন্দিরে এখন নতুন রঙ করা হয়েছে, এবং প্রতি শিবরাত্রিতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ শুধু সেই ঘণ্টাটি দেখতে আসে। রাজেশের নাম এখন পূজারী রাজেশ বাবা হয়ে গেছে। এবং সে প্রতিটি ভক্তকে একটি কথাই বলে — ‘ভগবান সেই দিন সবচেয়ে কাছে থাকেন, যখন আমরা নিজেদের থেকে সবচেয়ে দূরে চলে যাই।’