ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন… চীনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ভেঙে গেল!

ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন… চীনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ভেঙে গেল!

মধ্যপ্রাচ্য সংকট (Middle East Crisis): ইজরায়েল এবং ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত এমন একটি মোড় নিয়েছে, যার পূর্বাভাস দিতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা (Defense Experts) ক্লান্ত। প্রতিদিন এতে নতুন কিছু চমক আসছে।

এই যুদ্ধে ইরান এবং ইজরায়েল ক্রমাগত একে অপরের উপর আধিপত্য বিস্তার করছে। পুরো বিশ্বের নজর এখন আমেরিকার (America) দিকে। এর মধ্যেই তৃতীয় একটি দেশ হলো চীন (China)। চীন এই মুহূর্তে চুপচাপ বসে তার এক বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন, গত কয়েক বছরে চীন মধ্যপ্রাচ্যের (Middle East) জন্য যে বুনন তৈরি করেছিল, তা এই সংঘাতের কারণে জট পাকিয়ে গেছে। শক্তি, কূটনৈতিক ভারসাম্য (Diplomatic Balance) এবং চীনের অনেক অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা (Economic Ambition) টালমাটাল হয়ে পড়েছে। এটি বোঝা জরুরি।

বহু বছর ধরে পাতা হয়েছিল ছক…
আসলে, ফোর্বস ম্যাগাজিন (Forbes Magazine) তার একটি ডিজিটাল রিপোর্টে এটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, চীন তার মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে এবং তার মধ্যে ৪৩ শতাংশ তেল শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে। এই নির্ভরতা দীর্ঘকাল ধরে চীনের দুর্বলতা বলে বিবেচিত হয়ে আসছে, যা স্বয়ং রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংও (Xi Jinping) স্বীকার করেছেন। তাই চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড (Belt & Road) প্রকল্প, বিকল্প জ্বালানি উৎস এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। কিন্তু বিকল্প জ্বালানি পুরোপুরি কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি। চীনের জ্বালানি নিরাপত্তা ইরান, সৌদি আরব (Saudi Arabia) এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর (Gulf Countries) উপরও নির্ভরশীল।

কিছু বছর আগে চীন সৌদি এবং ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি করিয়ে তার কূটনৈতিক শক্তির প্রদর্শন করেছিল। তখন মনে হয়েছিল যে চীন মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সফল হতে পারে। কিন্তু হামাসের (Hamas) হামলা, রেড সি সংকট (Red Sea Crisis) এবং এখন ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে যে, চীনের এই ভারসাম্য দুর্বল প্রমাণিত হচ্ছে। ইরানের পক্ষে ঝুঁকলে সৌদি আরবকে অসন্তুষ্ট করা এবং চুপ থাকলে ইরানের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা—চীন এখন উভয় সংকটে পড়েছে।

বিকল্পের অভাব… জিনপিং উভয় সংকটে
রিপোর্ট অনুযায়ী, চীনের সমস্যা শুধু তেল সরবরাহ নয়, বরং ভবিষ্যতের জ্বালানি রাজনীতিতে (Energy Politics) তার অবস্থানও। যদি সে ইরানকে খোলাখুলি সমর্থন করে, তাহলে উপসাগরীয় দেশগুলোর অসন্তোষের মুখোমুখি হতে হবে। যদি সে চুপ থাকে, তাহলে ইরান, পাকিস্তান (Pakistan) এবং রাশিয়ার (Russia) মতো অংশীদাররা প্রশ্ন তুলবে। এই কারণেই সম্প্রতি ইরান কর্তৃক চীন থেকে ৮০০ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উপাদান কেনার খবর উপসাগরীয় দেশগুলোকে চিন্তিত করেছিল। এছাড়াও, হরমুজ প্রণালী (Strait of Hormuz) খোলা রাখা চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেখানেও চীনের কোনো সামরিক উপস্থিতি নেই।

তাহলে কি টালমাটাল হয়েছে জ্বালানি কৌশল?
ইউক্রেন যুদ্ধ (Ukraine War) এবং বিশ্ব মন্দার (Global Recession) সময় চীন তার জ্বালানি সরবরাহ নেটওয়ার্ককে রক্ষা করতে পেরেছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে চীনকে শুধু বাজারের সঙ্গেই নয়, প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত সামরিক সমীকরণের (Military Equations) সঙ্গেও যুঝতে হচ্ছে। হুথি বিদ্রোহীরা (Houthi Rebels) চীনা জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু না করলেও, বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিটি নতুন সংঘাত চীনকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে সেখানে পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেছে।

কী কোনো ক্ষেত্র তৈরি করছে নাকি পিছিয়ে যাবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন বড় প্রশ্ন হলো, চীন কি তার অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক ভূমিকা বাড়াবে? সে কি ইরানকে অগ্রাধিকার দেবে নাকি সৌদি এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর তেল সরবরাহকে? যদি সে পিছিয়ে যায়, তাহলে তার বৈশ্বিক ক্ষমতার (Global Power) ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে। যদি সে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে আমেরিকা তার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত রয়েছে।

বর্তমানে এই যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন, একটি বিষয় স্পষ্ট যে, চীনের জন্য মধ্যপ্রাচ্য এখন কেবল একটি জ্বালানি বাজার নয়, বরং এটি একটি কূটনৈতিক জটিল জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। দেখতে হবে, চীন কীভাবে এর থেকে বেরিয়ে আসে। কারণ গত কয়েক বছরে চীন এই অঞ্চলে নিজের জন্য অনেক কৌশল তৈরি করে রেখেছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *