ইসরায়েল নাকি ইরান, কার মুদ্রা সবচেয়ে শক্তিশালী? যুদ্ধ ছাড়ুন, আসল খেলা তো এখানে!

ইসরায়েল নাকি ইরান, কার মুদ্রা সবচেয়ে শক্তিশালী? যুদ্ধ ছাড়ুন, আসল খেলা তো এখানে!

ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। কেউই পিছু হটতে রাজি নয়। দুই দেশেই সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মানুষ বেসমেন্ট-বাঙ্কারের মতো নিরাপদ আশ্রয়স্থলের দিকে ছুটছে। এই পুরো যুদ্ধে উভয় দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ফল যাই হোক না কেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর প্রভাব পড়া নিশ্চিত। এখন সরাসরি প্রশ্ন ওঠে উভয় দেশের মুদ্রার বিষয়ে। আসুন, জেনে নিই ইসরায়েল নাকি ইরান, কোন দেশের মুদ্রা সবচেয়ে শক্তিশালী এবং কেন।

ইসরায়েলের মুদ্রার নাম নিউ শেকেল (New Shekel)। এর সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। অন্যদিকে, ইরানে ইরানি রিয়াল (Iranian Rial) ব্যবহার করা হয়। ২০১৯ সালে ইরান এটি পরিবর্তন করে অন্য মুদ্রা আনতে চেয়েছিল কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।

ইসরায়েল নাকি ইরান, কার মুদ্রা সবচেয়ে শক্তিশালী?
ইসরায়েল বা ইরানের মধ্যে কোন দেশের মুদ্রা শক্তিশালী, তা অনেক উপায়ে নির্ধারণ করা যায়। যেমন – বিনিময় হার (Exchange Rate)। কোনো মুদ্রার মূল্য ডলার বা ইউরোর তুলনায় কত, তা বলে দেয় যে, দুটি দেশের মধ্যে কার মুদ্রা শক্তিশালী। এটি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক।

একটি আমেরিকান ডলারের বিনিময়ে ৩.৪৯ নিউ শেকেল পাওয়া যায়। এটি নির্দেশ করে যে ইসরায়েলের মুদ্রা শক্তিশালী। অন্যদিকে, ইরানের তুলনা করলে, একটি আমেরিকান ডলারের বিনিময়ে ৪২,১২৫ ইরানি রিয়াল পাওয়া যায়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এক ডলার পেতে একজন ইরানি ব্যক্তিকে ৪২,১২৫ ইরানি রিয়াল দিতে হবে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের একজন ব্যক্তিকে এক ডলার পেতে মাত্র ৩ নিউ শেকেল দিতে হবে। এতে স্পষ্ট যে, ইসরায়েলের মুদ্রার সামনে ইরানের মুদ্রা কোথাও দাঁড়াতে পারে না।

ইসরায়েলের মুদ্রা কেন শক্তিশালী, এবার তা বুঝুন?
ইসরায়েলের অর্থনীতি কেন শক্তিশালী, এবার তা বুঝে নেওয়া যাক। নেতানিয়াহুর দেশকে স্টার্টআপের দেশ বলা হয়। এখানে প্রতি ব্যক্তির চেয়েও বেশি স্টার্টআপ আছে। প্রযুক্তির দিক থেকে এটি বিশ্বের অনেক বড় দেশকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, এগ্রো-টেক, মেড-টেক, ফিন-টেক সহ অনেক সেক্টরে এটি শক্তিশালী অবস্থানে আছে। গুগল, মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলের মতো কো ম্পা নিগুলোর গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র এখানেই আছে।

ইসরায়েল দেশের আধুনিকীকরণ এবং হাই-টেক করার পাশাপাশি অর্থনীতিকে উন্নত করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এর প্রভাবও দেখা যায়। শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে ইসরায়েল তার জিডিপির একটি বড় অংশ ব্যয় করে। এখানকার সরকার এবং মুদ্রাস্ফীতি উভয়ই স্থিতিশীল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী IDF হাই-টেক অস্ত্র ব্যবহার করে। এই কারণেই ইসরায়েল প্রযুক্তি, অস্ত্র, ওষুধ, সফটওয়্যার এবং এগ্রিটেকের একটি বড় রফতানিকারক। ক্রমবর্ধমান রফতানি এবং দেশে বিদেশি মুদ্রার আগমন অর্থনীতিকে গতি দেয়। গ্লোবাল ব্র্যান্ডিংয়ের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ইসরায়েলের উপর বেশি। কম বেকারত্বও দেশের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

খামেনেইয়ের ইরানের অবস্থা দুর্বল কেন?
আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের উপর অনেক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর একটি বড় কারণ হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান তার পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে তেল ও গ্যাস বিক্রি করতে পারে না। ফলাফল, না বিদেশি মুদ্রা আসে আর না আসে বিনিয়োগ। ইসরায়েল সবসময়ই তার অর্থনীতিকে একটি সেক্টরের উপর নির্ভরশীল রাখেনি, কিন্তু ইরানের ৮০% এরও বেশি আয় একসময় তেল রফতানি থেকে আসত। নিষেধাজ্ঞা এবং তেলের বৈশ্বিক দাম কমার কারণে আয় মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে এবং মুদ্রার ওপর প্রভাব পড়েছে।

মুদ্রাস্ফীতির ক্রমবর্ধমান হার, দুর্বল ব্যাংকিং এবং আর্থিক ব্যবস্থা, বিদেশি ব্যাংকগুলির সাথে লেনদেনের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্নীতি ইরানের মুদ্রাকে শক্তিশালী হতে বাধা দেয়। এই কারণেই ইরানি রিয়ালের মূল্য হ্রাস পাচ্ছে।

ইরানি রিয়াল দুর্বল হওয়ার পেছনে একটি নয়, অনেক কারণ রয়েছে।

ইসরায়েল এবং ইরানের মুদ্রার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্যের একটি ছোট কিন্তু বিশেষ কারণও জেনে নেওয়া যাক। ইসরায়েলে তরুণরা স্টার্টআপ, ব্যবসা এবং প্রযুক্তির উপর মনোযোগ দেয়। তারা তাদের দেশের উন্নতির জন্য পরিচিত, কিন্তু ইরানের পরিস্থিতি এর উল্টো। এখানে শিক্ষিত তরুণরা দেশ ছেড়ে অন্য উন্নত অর্থনীতির দেশে সুযোগ খোঁজে। এই কারণেই ব্যক্তিগত খাতে নতুন শিল্প গড়ে ওঠে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না। স্বৈরাচারী শাসন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ইরানে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত রাখে। ফলস্বরূপ, গণতন্ত্র এবং মুদ্রা উভয়ই তাদের খারাপ সময়ের মধ্যে রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *