পাকিস্তান-চীন-বাংলাদেশ… প্রথমবারের মতো ত্রিপক্ষীয় বৈঠক, এখন কোন খেলা খেলছে ড্রাগন?

সম্প্রতি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বাড়তে শুরু করার পর থেকেই চীন (China) তার চাল দেখাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চীন, পাকিস্তান (Pakistan) এবং বাংলাদেশ (Bangladesh) বৃহস্পতিবার চীনে তাদের প্রথম ত্রিপক্ষীয় সরকারি বৈঠক (Trilateral Official Meeting) আয়োজন করেছে।

এই বৈঠককে ‘ডেভেলপমেন্ট ফ্রেন্ডলি ট্রাইলিটারাল ডায়ালগ’ (Development Friendly Trilateral Dialogue) বলা হলেও, এর পেছনের কৌশলগত গভীরতা এবং ভারতের (India) জন্য এর তাৎপর্য অনেক বেশি। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল তিন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে গতি দেওয়া। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের স্পষ্ট মত, এই বৈঠকের সময় এবং প্রেক্ষাপট ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

বৈঠকের প্রধান বিষয়বস্তু
জানা গেছে, বৈঠকে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং (Sun Weidong), বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী (Ruhul Alam Siddique) এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী (Imran Ahmed Siddique) উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বেলুচ (Amna Baloch) বৈঠকের প্রথম ধাপে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে অংশ নেন। বেলুচ এই মঞ্চের আয়োজনের জন্য চীনের প্রশংসা করে বলেন যে, তিন দেশের অভিন্ন অগ্রাধিকার হলো উন্নয়ন, যার সুবিধা সরাসরি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে।

বিআরআই (Belt and Road Initiative) এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি
চীন বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানকে তাদের ‘ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু এবং অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করে বিআরআই (Belt and Road Initiative) এর অধীনে সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলেছে। তিনটি দেশ মিলে একটি কার্যনির্বাহী গোষ্ঠী (Working Group) গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা শিল্প, বাণিজ্য, জল সম্পদ, জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাবে। বৈঠকের পর চীনের উপ-মন্ত্রী ওয়েইডং আফগানিস্তানের (Afghanistan) ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রধানমন্ত্রী হাজি মৌলভী আব্দুল সালাম হানাফির (Haji Maulvi Abdul Salam Hanafi) সঙ্গেও দেখা করেন।

মোহাম্মদ ইউনূস, চীন এবং পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠতা
এই বৈঠক এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনূস (Mohammad Yunus) চীন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছেন। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে চীন সফরের সময় ইউনূস বাংলাদেশকে চীনের কৌশলগত অংশীদার (Strategic Partner) হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবেশের জন্য চীন বাংলাদেশের মাধ্যমে পথ পেতে পারে। এর জবাবে ভারত ১৭ই মে বাংলাদেশের বস্ত্র পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এখন ইউনূসের সরকার পাকিস্তানের সঙ্গেও পুরনো সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।

এই বৈঠক শুধু একটি কূটনৈতিক আলোচনা নয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ভারতের জন্য এই বৈঠকটি কেবল একটি কূটনৈতিক আলোচনা নয়, বরং একটি কৌশলগত সতর্কতা। বাংলাদেশের নতুন নীতি এবং চীন-পাকিস্তান জোটকে (China-Pak Alliance) বিবেচনা করে ভারতকে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে সংযোগ, সীমান্ত সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক নীতিগুলির উপর আরও দ্রুত কাজ করতে হবে। ভারতকে এই বিষয়ে এখন তার কৌশলকে গতি দিতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *