ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যে বড় মোড়, ভারত এখানে পুরো খেলা বদলে দিয়েছে

গত সাত দিন কেবল ভারতের জন্যই নয়, পুরো বিশ্বের জন্যও তেমন ভালো যায়নি। ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজার এবং আর্থিক সম্পদকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এর ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মনেও ভয় ঢুকে গেছে। ভারতেরও আশঙ্কা ছিল যে, ভারত কিছু ক্ষেত্রে বড় ক্ষতির শিকার হতে পারে। কিন্তু দেশ এই পরিস্থিতিতে পুরো খেলাটাই পাল্টে দিয়েছে। ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কথা বললে, টানা দ্বিতীয় সপ্তাহে বৃদ্ধি দেখা গেছে। ভারতের কোষাগারে ২ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এসেছে।

বিশেষ ব্যাপার হলো, ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৮ মাসের উচ্চতায় পৌঁছেছে। পূর্বের রেকর্ড ভাঙতে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এখনও ৬ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। ভারতের অর্থনীতি যে গতিতে পারফর্ম করছে, তাতে মনে হচ্ছে আগামী এক মাসের মধ্যে এই রেকর্ডও ভেঙে যাবে। অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সামান্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। আসুন, জেনে নিই ভারত এবং পাকিস্তানের কোষাগারে কতটা বৃদ্ধি দেখা গেছে?

ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বৃদ্ধি
ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্থাৎ ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভে টানা দ্বিতীয় সপ্তাহে বৃদ্ধি দেখা গেছে। রিজার্ভ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৩ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ২.২৯ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বৃদ্ধি দেখা গেছে। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬৯৮.৯৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষ ব্যাপার হলো, এটি সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর পর থেকে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৮ মাসের উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর আগে, ৬ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫.১৭ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৬৯৬.৬৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। এর অর্থ হলো, ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টানা দুই সপ্তাহে ৭.৪৬ বিলিয়ন ডলারের বৃদ্ধি দেখা গেছে।

রেকর্ড স্তর থেকে কতটা পিছিয়ে
বিশেষ ব্যাপার হলো, ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড স্তর থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর শেষে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭০৪.৮৮ বিলিয়ন ডলারের সর্বকালের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। এখন এই স্তর ভাঙতে ৫.৯৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে গতিতে বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শীঘ্রই এই রেকর্ড ভেঙে দেবে। তবে, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুপির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রচুর পরিমাণে ডলার ব্যবহার করছে। আগামী দিনে এতে কিছুটা হ্রাসও দেখা যেতে পারে।

স্বর্ণের রিজার্ভেও বৃদ্ধি
অন্যদিকে, স্বর্ণের রিজার্ভেও বৃদ্ধি দেখা গেছে। এর সাথে বিদেশী মুদ্রা সম্পদও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশী মুদ্রা সম্পদের কথা বললে, এটি ১.৭৪ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৫৮৯.৪৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ডলারের প্রেক্ষিতে উল্লেখিত বিদেশী মুদ্রা সম্পদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রাখা ইউরো, পাউন্ড এবং ইয়েনের মতো অ-মার্কিন মুদ্রার ওঠানামার প্রভাব অন্তর্ভুক্ত থাকে। এছাড়াও, স্বর্ণে ৪২.৮ মিলিয়ন ডলারের বৃদ্ধি দেখা গেছে। এর ফলে দেশের স্বর্ণের রিজার্ভ ৮৬.৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে যে, এসডিআর (Special Drawing Rights) ৮.৫ মিলিয়ন ডলার বেড়ে ১৮.৭৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সপ্তাহে আইএমএফের কাছে ভারতের সংরক্ষিত তহবিলও ৪.৩ মিলিয়ন ডলার বেড়ে ৪.৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

পাকিস্তানের রিজার্ভে সামান্য বৃদ্ধি
চীনা সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া অনুযায়ী, ১৩ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের জারি করা বিবৃতি অনুযায়ী, এসবিপি-এর রিজার্ভ এক সপ্তাহ আগের ১১.৬৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১১.৭২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির কাছে থাকা নেট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫.২৮ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংক জানিয়েছে যে, ১৩ জুন পর্যন্ত পাকিস্তানের মোট তরল বৈদেশিক রিজার্ভ প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *