এমন এক ‘সিক্রেট’… এখন ভারত যা চাইবে, পাকিস্তান সেটাই করবে! একসাথে ৩৮টি দেশ বিরুদ্ধে চলে গেল

পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে একটি গুরুতর তথ্য সামনে এসেছে। ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) এর নতুন রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে, ২০২০ সালে ভারত কর্তৃক ধরা পড়া একটি সন্দেহজনক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উচ্চ প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম বোঝাই ছিল, যা ভুল নথিপত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের “ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্স (NDC)” এ পাঠানো হচ্ছিল।
এটি সেই একই সংস্থা যা দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে জড়িত। এখন ভারত এই বিষয়টি FATF-এর সামনে আবার তুলছে এবং পাকিস্তানকে পুনরায় ধূসর তালিকায় (গ্রে লিস্ট) অন্তর্ভুক্ত করার কূটনৈতিক প্রচারে নেমেছে।
কীভাবে বিষয়টি সামনে এলো?
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তথ্য পায় যে, চীনের জিয়াংইন বন্দর থেকে হংকং-এ নিবন্ধিত একটি জাহাজ ‘ডা সুই ইউন’ (Da Cui Yun) করাচির পোর্ট কাসিমের দিকে রওনা হয়েছে। ভারতীয় শুল্ক কর্মকর্তারা কান্দলা বন্দরে এই জাহাজটি আটক করে এবং তল্লাশির সময় তাতে ৩৫-৪০ ফুট লম্বা একটি প্রেসার চেম্বার উদ্ধার করা হয়।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি অটোক্লেভ ছিল যা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তদন্তে জানা যায় যে, এই সরঞ্জামটি ভুল নথিপত্রের মাধ্যমে লুকিয়ে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু শিপিং ডিটেইলসে স্পষ্ট ছিল যে এটি পাকিস্তানের NDC-এর জন্যই যাচ্ছিল।
FATF কেন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে?
FATF এর রিপোর্টে এই ঘটনাকে একটি গুরুতর বৈশ্বিক নিরাপত্তা লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের কার্যকলাপ ইঙ্গিত দেয় যে পাকিস্তান সম্ভবত অস্ত্র বিস্তার অর্থায়নে (proliferation financing) জড়িত থাকতে পারে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে যে, যদি এই ধরনের প্রচেষ্টাকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তবে এটি আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার অপব্যবহারের কারণ হতে পারে।
উল্লেখ্য, FATF-এ সম্পূর্ণরূপে ৩৮টি দেশ রয়েছে, যখন এর নেটওয়ার্কে ১৮৭টি দেশ রয়েছে। ৩৮টি দেশের মধ্যে অধিকাংশই এই বিষয়ে তাদের বিরোধিতা প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের পুরোনো ভাবমূর্তি আবারও প্রশ্নের মুখে
পাকিস্তান এর আগে ২০০৮, ২০১২ এবং ২০১৮ সালে FATF এর ধূসর তালিকায় ছিল। ২০২২ সালের অক্টোবরে তাকে সাময়িক স্বস্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন ভারত কর্তৃক প্রদত্ত নতুন প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে আবারও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করা হচ্ছে। ধূসর তালিকায় নাম এলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর গভীর প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ঋণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং IMF এর মতো সংস্থাগুলি থেকে সহায়তা প্রাপ্তিতে।
ভারতের কৌশল: FATF-এ ব্যাপক সমর্থন
ভারত FATF-কে জমা দেওয়া একটি বিস্তারিত ডসিয়ারে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক, তাদের অর্থায়নের উৎস এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সম্পর্কিত সূত্রগুলি অন্তর্ভুক্ত করেছে। সূত্র অনুযায়ী, ভারত ২৩টি সদস্য দেশের সমর্থন লাভ করেছে, বিশেষ করে পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
একজন সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তা অনুযায়ী, পাকিস্তান বিশ্ব সংস্থাগুলি থেকে প্রাপ্ত তহবিল সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে সমর্থন এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করছে। এটি শুধু ভারতের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য হুমকি।
যদি পাকিস্তান ধূসর তালিকায় ফিরে আসে তাহলে কী হবে?
বৈদেশিক বিনিয়োগে ব্যাপক পতন।
IMF এবং বিশ্ব ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হবে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা।
এর আগেও ২০০৮-২০১৯ সালের মধ্যে পাকিস্তানের $৩৮ বিলিয়ন অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল।
ভারত এই নতুন প্রকাশনাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক চাপ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, যাতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ এবং অস্ত্রের অবৈধ বিস্তার থেকে সরে আসতে বাধ্য করা যায়। FATF এর পরবর্তী বৈঠকে পাকিস্তানের ধূসর তালিকায় ফিরে আসা একটি বড় ইস্যু হতে পারে, যা প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং সেনাপ্রধান আসীম মুনির এর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।